যশোরের রাজারহাটে চামড়ার ব্যাপক দরপতন, তিন কোটি টাকার বেচাকেনা

যশোর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মোকাম রাজারহাটে এবার কোরবানির চামড়ার দামে অস্বাভাবিক পতন ঘটেছে। এতে প্রান্তিক চামড়া ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তারপরও ঈদ-পরবর্তী দ্বিতীয় হাটবারে আজ শনিবার এই মোকামে ৭০ হাজার পিস চামড়া কেনাবেচা হয়েছে, যার দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা।

ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রায় এক দশক ধরে চামড়ার দাম নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। তাঁরা চামড়াশিল্পের মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষও কোরবানির চামড়ার উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। গত বছরের তুলনায় এবার চামড়ার দরপতন ঘটেছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ রাজারহাট মোকামে সবচেয়ে বড় গরুর চামড়া ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা ও ছোট গরুর চামড়া ২০০ টাকা থেকে শুরু করে আরেকটু বেশি দামে বেচাকেনা হয়েছে। ছাগলের চামড়া বেচাকেনায় তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী বলেন, ‘ঈদের দুই দিন পর গত বুধবার রাজারহাটে ৫৯টি গরুর চামড়া এনে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এ বছর যে গরুর চামড়া ৪৫০ টাকায় বিক্রি করেছি, গত বছর ওই মানের চামড়া ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’

খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় ও দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাট। ঈদ-পরবর্তী দ্বিতীয় হাটে আজ শনিবার এ হাট বেশ জমজমাট ছিল। সকালে হাটে গিয়ে দেখা যায়, দূরদূরান্ত থেকেও চামড়া নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা।

ফলে আশপাশের সড়কে চামড়া নিয়ে বসতে হয়েছে অনেক ব্যবসায়ীকে।

তবে কোরবানির পর পশুর চামড়ার কম দাম পেয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যশোর সদরের ইছালি গ্রামের বিশ্বজিৎ কুমার ১২২টি গরু ও ২০টি ছাগলের চামড়া নিয়ে হাটে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম কম। সরকার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও পাওয়া যাচ্ছে ২৫ টাকা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করা, লবণ লাগানো ও পরিবহন খরচ মিলিয়ে প্রতিটি গরুর চামড়ার দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পড়েছে। মোকামে এসে কেনা দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। কোনো লাভ হলো না। কোনো রকমে পুজি বাঁচিয়েছি।’

স্থানীয় আড়তদার হাসানুজ্জামান বলেন, ‘সাধারণত বড় আকারের গরুর চামড়া ৩৫ থেকে ৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১ থেকে ৩০ বর্গফুট এবং ছোট আকৃতির গরুর চামড়া ১৬ থেকে ২০ বর্গফুট হয়ে থাকে। প্রতিটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি মিলিয়ে গড়ে ৩০০ টাকা খরচ হয়। গত বছরের তুলনায় এবার লবণের দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় খরচ বেড়েছে।’

যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ‘আজ রাজারহাটে প্রায় ৭০ হাজার চামড়া উঠেছে। প্রায় তিন কোটি টাকায় এসব চামড়া হাতবদল হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ভালো মানের গরুর চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে অথবা কাছাকাছি দামে বিক্রি হয়েছে। নিম্ন মানের চামড়ার দাম কম হবে, এটাই স্বাভাবিক। খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কম দামে কেনা চামড়া বিক্রির সময় দাম অনেক বেশি চান।’

আলাউদ্দিন মুকুল আরও বলেন, ‘সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির উদ্যোগ নিলে এ খাত আরও বিকশিত হবে। এ ছাড়া সরকার খুচরা চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য অল্প সুদে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করলে চামড়া ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে।’