মন্ত্রীর কাছে নালিশ প্রতিমন্ত্রীর

এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরির তাগাদা দিয়ে জিইডি সদস্যকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম চিঠি দেন।

করোনার প্রভাব প্রায় প্রতিটি খাতে পড়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য পরিস্থিতি, বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রায় সব খাতেই করোনার ধাক্কা লেগেছে। সেই ক্ষত কাটতে না কাটতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের ডামাডোলে বিশ্ব অর্থনীতির আবারও টালমাটাল অবস্থা। যার ঢেউ এসে লেগেছে বাংলাদেশেও। এমন এক পরিস্থিতিতে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা কোথায় দাঁড়িয়েছে, তার হালনাগাদ কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদনের মাধ্যমে আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এসব সূচকের ভিত্তিতে এসডিজির অগ্রগতির হিসাব করে সরকার। তার ভিত্তিতে বিভিন্ন নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু ২০২০ সালের পর এসডিজির কোনো প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি। এ প্রতিবেদন তৈরি করার কথা পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি)।

এসডিজির হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরির জন্য জিইডি সদস্য (সচিব মর্যাদার) মো. কাউসার আহাম্মদকে একাধিকবার তাগাদা দিয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। ২০২২ সালের তৃতীয় এসডিজি প্রতিবেদন তৈরির জন্য তাগাদা দেওয়ার পরও জিইডি সদস্য কথা না শোনায় পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে নালিশ করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রী বলছেন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এই বিভাগের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রসঙ্গত, শামসুল আলম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার আগে প্রায় ১০ বছর জিইডির সদস্য ছিলেন।

* ২০২০ সালের পর এসডিজির আর কোনো প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি। * অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্বিতীয় ‘এসডিজি অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি হয়নি। * তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো তৈরি হয়নি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত চার মাস আগে। গত ২৬ জুন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমের দপ্তর থেকে জিইডি সদস্য মো. কাউসার আহাম্মদের কাছে কিছু তথ্য–উপাত্তের হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরির জন্য আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠি দেন প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব আবদুল আজিজ। চিঠিতে বলা হয়, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ দারিদ্র্য ও এসডিজি–বিষয়ক সরকারের ফোকাল পয়েন্ট। এই বিভাগটি সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং নিয়মিতভাবে সেগুলোর মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ করে থাকে। ২০২২ সালের প্রথম ভাগেই এসডিজির তৃতীয় অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরির কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা প্রস্তুত করা হয়নি। অনতিবিলম্বে তৃতীয় এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন।

চিঠিতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্বিতীয় ‘এসডিজি অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরির নির্দেশও দেওয়া হয়। বলা হয়, এই অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করা সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের একটি নিয়মিত দায়িত্ব। কিন্তু অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তৃতীয় বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। এখন পর্যন্ত এই অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য মো. কাউসার আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনবলসংকটসহ নানা কারণে সময়মতো এসব প্রতিবেদনের কাজ শুরু করা যায়নি। এখন এসব প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।’

জিইডি সদস্যকে তাগাদা দেওয়ার পর কোনো কাজ না হওয়ায় গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম নিজে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে চিঠি দিয়ে পুরো বিষয়টি অবহিত করেন। মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখজনক হলো জিইডি যথাসময়ে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।’ চিঠিতে ওই দুটি প্রতিবেদন ছাড়াও আরও কয়েকটি প্রতিবেদন প্রস্তুতে জিইডির ব্যর্থতার কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রণয়নের তিন বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও এখন পর্যন্ত মধ্যবর্তী প্রতিবেদন প্রকাশের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। একইভাবে তিন বছর আগে মেয়াদ পার হলেও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদনও তৈরি হয়নি।

মন্ত্রীকে লেখা চিঠির শেষ অংশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ওপরের বিষয়গুলো শিগগিরই নিষ্পন্ন করতে আপনাকে অবহিত রেখে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। এতে প্রতীয়মান হয় যে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের কার্যক্রম সার্বিকভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আপনার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগটি জনবলসংকটে ভুগছে। তাই পর্যাপ্ত জনবল চেয়ে একাধিকবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেওয়া হয়। এ নিয়ে পরিকল্পনাসচিব একাধিকবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। বর্তমানে জিইডিতে যুগ্ম প্রধানসহ বেশ কয়েকটি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদ শূন্য আছে।