পণ্যবাহী ট্রাকের গতি বৃদ্ধি পেলে রপ্তানি বাড়বে ৮%

সম্মেলনের এক সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশে যদি যানজট বন্ধ করা যায়, তাহলে ট্রাকমালিকদের গড় খরচ ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমবে।

দ্বিতীয় দিনের শুরুতে বিনিয়োগের সম্ভাবনাবিষয়ক কর্ম–অধিবেশনে উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাকের গতি বাড়াতে পারলে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’খ্যাত এই মহাসড়কে এখন প্রতিটি ট্রাকের গড় গতি ঘণ্টায় ১৯ কিলোমিটার। এই গতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারে উন্নীত করা গেলে দেশের মোট রপ্তানি ৮ শতাংশ বাড়বে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত তিন দিনের ব্যবসা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের এক সেমিনারে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। ‘বিল্ডিং কানেকটিভিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর দ্য নেক্সট ফেজ অব গ্রোথ: ইনভেস্টিং ইন লজিস্টিকস’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি জানান, বাংলাদেশে যদি যানজট বন্ধ করা যায়, তাহলে ট্রাকমালিকদের গড় খরচ ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমবে। যানজট পরিস্থিতির সমাধান করা গেলে লজিস্টিকস তথা পণ্য সরবরাহ খাতে খরচ কমবে। বাংলাদেশে লজিস্টিকস খাতে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করেন মাসরুর রিয়াজ।

এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিন দিনের এই সম্মেলন শুরু হয় শনিবার। গতকালের সেমিনারে বক্তারা লজিস্টিকস খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির তাগিদ দেন। একই সঙ্গে তাঁরা আঞ্চলিক যোগাযোগ, সড়ক, রেল ও নৌপথে পরিবহন সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

দেশে সরবরাহ (লজিস্টিকস) খাতের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, এ বিষয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে প্রধান সমস্যা জমির অপ্রতুলতা। সরকার কৃষিজমিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কৃষিজমি রক্ষা করে পরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

হা–মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ভারতে একটি ট্রাকে প্রতি কিলোমিটারে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে খরচ পড়ে ২ সেন্ট। অথচ বাংলাদেশে এই খরচ পড়ে ৮ থেকে ১০ সেন্ট। ভারত ও ভিয়েতনামের তুলনায় বন্দরের সক্ষমতায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে।

সামিট পোর্ট অ্যালায়েন্সের এমডি আলী জওহের রিজভী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেল সংযোগ নেই। চট্টগ্রাম বন্দরের এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে হবে। দেশে একটি দক্ষ বন্দর তৈরি করা জরুরি। দেশে সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) মডেলে পরিবর্তন আনারও তাগিদ দেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালক আবদুল্লাহে শেখ বলেন, বাংলাদেশে লজিস্টিকস খাতে খরচ যদি ২৫ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে রপ্তানি বাড়বে ২০ শতাংশ।

এ কে খান গ্রুপের পরিচালক আবুল কাশেম খানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুরের ভাইস প্রেসিডেন্ট আলফ্রেড সিম, ডিএইচএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিয়ারুল হক, দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ডের এমডি শামীমুল হক প্রমুখ।