কাপ্তান বাজারে পাটি সস্তা, কারওয়ান বাজারে খাইট্টা

রাজধানীর পশুর হাটের পাশেই পাওয়া যায় পশুখাদ্য। সেখান থেকে না কিনলে সবুজ ঘাস, কাঁঠালপাতা, খড় ও ভুসি কিনতে পারবেন পাড়ার মোড় থেকে। কোরবানি নাকের ডগায় হওয়াতে হাত বাড়ালেই এসব পণ্য পাবেন।

ইতিমধ্যে হয়তো অনেকের ছুরি-চাপাতি কেনা কিংবা ধার দেওয়া শেষ। এবার খুঁজছেন রশি, পাটি, পলিথিন ও খাইট্টার (মাংস কাটার জন্য ব্যবহৃত কাঠ) মতো টুকিটাকি জিনিস। বাসার আশপাশে কোথাও পেলে তো ভালো, না–হয় এসব জিনিস কিনতে আপনাকে ছুটতে হবে কারওয়ান বাজার বা কাপ্তান বাজারের মতো জায়গায়।

আজ মঙ্গলবার কাপ্তান বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাভার, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের মতো জায়গা থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা খাইট্টা, পাটি, রশি, সবুজ ঘাস, কাঁঠালপাতা ও ভুসির মতো পণ্য নিয়ে এসেছেন। এক দিন বাদেই ঈদ, তাই ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই বেচাকেনায় বেশ ব্যস্ত দেখা গেল। যেহেতু পাড়া-মহল্লায় পশুর খাবার সহজেই পাওয়া যায়, তাই বাজার থেকে কেনা হচ্ছে রশি, পলিথিন, পাটি ও খাইট্টার মতো পণ্য।

কাপ্তান বাজারে হোগলার পাটি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। দুটো নিলে ৩০০ টাকা। একই পাটি কারওয়ান বাজার থেকে কিনতে হলে আপনাকে দাম দিতে হবে প্রতিটি ২০০ টাকা। দামদর করলে কিংবা দুটো কিনলে ১৮০ টাকা করে নিতে পারবেন। তাতে বলা যায়, কাপ্তান বাজারে হোগলার পাটি তুলনামূলক সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে।
আবার কারওয়ান বাজারে খাইট্টা তুলনামূলক সস্তা দেখা গেছে। আকারভেদে কারওয়ান বাজারে তেঁতুল কাঠের খাইট্টা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে হাজার টাকায়।

কাপ্তান বাজারে ৩০০ টাকার নিচে খাইট্টা নেই। বেলগাছের খাইট্টাও পাওয়া যায়।
তবে তেঁতুল কাঠের খাইট্টা মানের দিক থেকে ভালো, এটা উল্লেখ করে কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে যে খাইট্টা, তার সর্বনিম্ন দাম ৩০০ টাকা। সর্বোচ্চ দামের যেগুলো, সেটা হাজার টাকা, যা লম্বায় দুই ফিটের ওপরে।’

মো. ইউসুফ জানালেন, কাঁচা তেঁতুল কাঠের হওয়ায় এসব খাইট্টায় মাংস কাটাকাটি করতে সুবিধা হয়। এগুলো কোরবানির সময় ছাড়াও বাসার কাজে পরে ব্যবহার করা যাবে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

পশুর জন্য দড়ি কিংবা মাংস রাখার জন্য যদি কেউ পলিথিন কিনতে চান, তাহলে সেগুলোও এসব বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আকারের ওপর নির্ভর করে একেকটি রশি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর পলিথিন কত পুরু, তার ওপর নির্ভর করে প্রতি ফুট বা গজে কেনা যাচ্ছে। মাঝারি মানের পলিথিনের গজ পড়ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। তবে শুধু কোরবানির প্রস্তুতি নয়, শেষ সময়ে পশুর যত্নের যাতে কোন ঘাটতি না হয়, সে জন্য ক্রেতারা বাজারে এসে ঘাস, খড় ও ভুসির মতো পণ্য কিনছেন।

মাদারীপুরের শিবচর থেকে সবুজ ঘাস ও খড় নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এসেছেন মো. জাহাঙ্গীর শিকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবার ঈদের আগে আসি। ট্রাকে করে কয়েকজন মিলে নিয়ে আসি। বেচাকেনা শেষে ঈদের আগের রাতে বাড়িতে ফিরি। এবার প্রতিটি সবুজ ঘাস ও খড়ের আঁটি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করছি। ট্রাক ভাড়া বেশি পড়ায় অন্যবারের তুলনায় দাম একটু বাড়তি।’

পশুর খাবার হিসেবে ভুসি ও কাঁঠালপাতা কিনতেও দেখা গেছে অনেককে। মানভেদে কেজিপ্রতি ভুসির দাম পড়ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। আর কাঁঠাল পাতা কিনতে গেলে দরদাম করে নিতে হবে। ডালের আকার যত বড়, দাম তত বেশি। বড় বাজারগুলোর বাইরে পশুর খাবারের দাম অবশ্য একটু বেশি। কারওয়ান বাজারের কাছে নিউ ইস্কাটন এলাকার প্রতি আঁটি সবুজ ঘাস ও খড় একদাম ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। একদামে ভুসি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ টাকায়।

নিউ ইস্কাটনের লন্ড্রি ব্যবসায়ী মনির হোসেন সঙ্গে আরও কয়েকজনকে নিয়ে মৌসুমি খড়ের ব্যবসায়ী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই দিনের ব্যবসা। আবার মহল্লার সবাই পরিচিত। কম-বেশি দাম রাখি, তাতে আমাদের ঈদের খরচটা ওঠে।’

কারওয়ান বাজার থেকে প্রাইভেট কারে পশু খাবার ওঠানোর সময় আনারুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিন হলো মালিক আড়াই লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। আগে তিনি একবার খাবার কিনে নিয়ে গেছেন। তাতে দুই দিন চলেছে। আজকের কেনা খাবারে কোরবানি পর্যন্ত চলবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। তার মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২ গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। এসব পশুর বেশির ভাগই এক দিনে জবাই করা হয়। পশু কেনা থেকে শুরু করে মাংস কাটাকাটি শেষ করতে তাই কোরবানিদাতাকে আনুষঙ্গিক অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়।