পাইকারি বাজার
অচলাবস্থা কেটেছে খাতুনগঞ্জে, শ্রমিকেরা কাজে ফিরেছেন
প্রকাশ্য ছুরিকাঘাতে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় দুদিন ধরে অচলাবস্থা ছিল খাতুনগঞ্জে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
টানা দুই দিন ধরে দেশের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন দেশের বিভিন্ন স্থানের ক্রেতারা। ধর্মঘটের কারণে সময়মতো পণ্য নিয়ে যেতে পারেননি তাঁরা। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে তাঁদের।
পিকআপচালকের ছুরিকাঘাতে এক শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত থেকে পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। ঘটনার বিচার হবে, এই আশ্বাসে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কর্মবিরতি সাময়িক প্রত্যাহার করে কাজে ফেরেন শ্রমিকেরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় মেসার্স সামির ট্রেডিংয়ের শ্রমিক মো. মাসুদকে দোকান থেকে টেনে বের করে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে গাড়িচালক মো. রাসেলের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকেরা। গতকাল বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শ্রমিকের মৃত্যু হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিকেরা। গতকাল সকাল থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকেরা। এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
■ দুদিন অচলাবস্থার পর গতকাল বুধবার রাতে পুলিশ, প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতারা শ্রমিকদের সঙ্গে খাতুনগঞ্জে দফায় দফায় বৈঠক করেন।
■ বৈঠক শেষে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি সাময়িক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
গতকাল দুপুরে খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, সড়কে সারি সারি ট্রাক। তবে কোথাও গাড়ি থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো হচ্ছে না। শ্রমিকেরা কোথাও স্লোগান দিচ্ছিলেন। সবার মধ্যে চাপা ক্ষোভ। মো. আকতার নামে এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত না করলে আমরা ঘরে ফিরব না। পরিবারকেও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বেচাকেনা হয়। এখানকার প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব পণ্য সারা দেশে যায়। ভোজ্যতেল, চিনি, গম, ডাল, মসলা ও কাঁচা পণ্য থেকে শুরু করে রাসায়নিক, ঢেউটিন, রংসহ নানা ধরনের পণ্য বেচাকেনা হয়। আমদানি করা চালও বিক্রি হয় এ বাজারে। তবে চালের মূল আড়ত খাতুনগঞ্জের পাশে চাক্তাই বাণিজ্যকেন্দ্রে। খাতুনগঞ্জ ও আশপাশের বাণিজ্যকেন্দ্র মিলিয়ে পাঁচ হাজারের মতো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে।
দুই দিন অচলাবস্থার পর গতকাল বুধবার রাতে পুলিশ, প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতারা শ্রমিকদের সঙ্গে খাতুনগঞ্জে দফায় দফায় বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি সাময়িক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। শ্রমিকদের সংগঠন বৃহত্তর খাতুনগঞ্জ মালামাল লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক আবদুল কাদির প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচা পণ্য যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য ব্যবসায়ীরা কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। প্রশাসনও আসামিদের গ্রেপ্তারে আশ্বাস দিয়েছে। এ জন্য কর্মবিরতি সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে বিক্ষোভ চলবে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, বড় বাণিজ্যকেন্দ্রে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির বলেন, আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। যেকোনো সময় আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।