বাংলাদেশের আসবাবশিল্পে হাতিলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশের বেশির ভাগ আসবাব–ব্র্যান্ড স্বাধীনতার পর থেকে বিকাশ লাভ শুরু করে। গার্মেন্টসশিল্পের মতো আসবাবশিল্পও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে। এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় বাংলাদেশে এখন রপ্তানি বেড়েছে ২৫১ শতাংশ, যার পরিমাণ প্রায় ৩১ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার। ২৫ লাখের বেশি মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।

বিশ্বের সব জায়গায়ই আবাসনের চাহিদা পূরণের পরই যে চাহিদার সৃষ্টি হয়, তা হলো আসবাব। বর্তমানে একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফ্ল্যাটের আকারও ছোট হয়ে আসছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে আধুনিক বিশ্বের নিত্যনতুন ট্রেন্ডগুলো মানুষ গ্রহণ করছে খুব সহজেই। ক্রেতার চাহিদা ও রুচির পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত, খুব দ্রুত। মানুষ এখন স্লিম ও সিম্পল ডিজাইনের ফার্নিচার পছন্দ করছে। মাল্টিফাংশনাল আসবাবগুলোও এখন ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই রুচি আর চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে হাতিলও নিত্যনতুন আর উদ্ভাবনী ডিজাইনের আসবাব তৈরির জন্য রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্টের ওপর আগের থেকে বেশি জোর দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আধুনিক, স্লিম ও রুচিসম্মত ডিজাইনের আসবাব নিয়ে আসছে হাতিল।

তিন দশক ধরে ক্রেতাদের আসবাবের চাহিদা ও রুচির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে হাতিল। ফলে আসবাবজগতে হাতিল একটি সুপরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত ও রুচিশীল ডিজাইনের মাধ্যমে। বর্তমানে দেশব্যাপী হাতিলের ৭২টির বেশি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। বাংলাদেশে ভালো একটি অবস্থান তৈরির পাশাপাশি এই ব্র্যান্ডটি আন্তর্জাতিক আসবাব–বাজারেও সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছে। অতিসম্প্রতি হাতিল ভারতে তাদের ২৬তম বিক্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করেছে। ভুটানেও রয়েছে হাতিলের দুটি বিক্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, থাইল্যান্ড, মিসর, রাশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেও রপ্তানি হচ্ছে হাতিলের আসবাব।

হাতিল তার নিজস্বতা ধরে রেখে দেশীয় বাজারের জন্য যে আসবাব তৈরি করছে, বিদেশেও একই আসবাব রপ্তানি করছে নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ে। জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য সরকার এই শিল্পকে ‘থ্রাস্ট সেক্টর’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। দেশীয় বাজারে আন্তর্জাতিক মানের আসবাব তৈরি হওয়ায় আসবাব আমদানির পরিমাণও হ্রাস পাচ্ছে প্রতিবছর। এ কারণেই হাতিল ‘বেস্ট ইন ইমপোর্ট সাবস্টিটিউশন’ ক্যাটাগরিতে অর্জন করেছে ‘সেকেন্ড এইচএসবিসি বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা জোগানের জন্য হাতিলের আসবাব তৈরি হয় হাতিলের নিজস্ব কারখানায়। সাভারের জিরানীতে অবস্থিত কারখানাটিতে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। হাতিলের কারখানাটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ আসবাব তৈরির কারখানা, যেখানে আসবাব তৈরিতে সর্বাধুনিক ইউরোপিয়ান প্রযুক্তির মেশিনারিজের পাশাপাশি রোবটেরও ব্যবহার হয়ে থাকে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ও ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির মতো অত্যাধুনিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ক্রেতার আসবাব ক্রয়কে আরও সহজতর করেছে হাতিল।

হাতিল বাংলাদেশের একটি ISO 9001: 2015 সার্টিফায়েড প্রতিষ্ঠান এবং এই সার্টিফিকেট কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হাতিল ‘এফএসসি সার্টিফায়েড’ বন থেকে কাঠ সংরক্ষণ করে থাকে, যাতে গাছ কাটার ফলে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব না পড়ে। তা ছাড়া আসবাব তৈরিতে কাঠের অব্যবহৃত অংশ আধুনিক প্রযুক্তির রিসাইক্লিং–ব্যবস্থার মাধ্যমে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ব্র্যান্ডটি।

যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক অনুশীলনে পরিবেশবান্ধব এবং পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল প্রক্রিয়া বা প্রযুক্তি গ্রহণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে, সেগুলোর মধ্যে হাতিলও রয়েছে। গ্রিন অপারেশনের জন্য ২০১৩ সালে ‘এইচএসবিসি–দ্য ডেইলি স্টার ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ড’ পায় হাতিল

গ্রিন অপারেশনের অংশ হিসেবে হাতিল ‘গ্রিন অ্যানার্জি প্রজেক্ট’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য হাতিলের কারখানার ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে, যা জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের ওপরও চাপ কমাবে।