বাধা নেই, তবু ঝুলে আছে চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী–শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) দ্বিবার্ষিক নির্বাচন নিয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। উচ্চ আদালতের রায়ে নির্বাচনের পথ কিছুটা সহজ হলেও এরপর এখনো নতুন তারিখ ঘোষণা করেনি চেম্বার প্রশাসন। এদিকে আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এক ব্যবসায়ী আপিল করায় নির্বাচন আবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর চেম্বারের পুরো পর্ষদ পদত্যাগ করে। তখন থেকে প্রশাসক দিয়েই চলছে চেম্বারের কার্যক্রম। প্রায় ১১ মাস পর গত ১১ আগস্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও এর পর থেকে আদালতেই ঝুলে আছে নির্বাচনের বিষয়টি। তফসিল অনুযায়ী গত ১ নভেম্বর ভোট হওয়ার কথা থাকলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি প্রশাসন।
চট্টগ্রাম চেম্বারসহ অন্তত সাতটি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা নির্বাচনে বিলম্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, প্রায় এক বছর ধরে চেম্বার নেতৃত্বশূন্য। শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনেই নেতৃত্ব না থাকায় সরকারি বিভিন্ন সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দাবিদাওয়া তুলে ধরার মতো কার্যকর প্রতিনিধি নেই। জাতীয় নির্বাচনের অজুহাত দেখানো হলেও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনে নির্বাচন হচ্ছে। সদিচ্ছার অভাবেই চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনে বিলম্ব ঘটছে বলে মনে করেন তাঁরা।
চেম্বারের নির্বাচনে মূল জটিলতা তৈরি হয়েছে দুটি শ্রেণির নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন কমিশনের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না থাকা নিয়ে। চট্টগ্রাম চেম্বারে ব্যবসায়ীদের ভোটে সাধারণ শ্রেণি থেকে ১২ জন, সহযোগী শ্রেণি থেকে ৬ জন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে ৩ জন করে পরিচালক নির্বাচিত হন। পরে নির্বাচিত এসব পরিচালকের ভোটে একজন সভাপতি ও দুজন সহসভাপতি নির্বাচিত হন।
আদালত ও চেম্বার সূত্র জানায়, শুরুতে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণির আটটি সংগঠনকে বাদ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় চেম্বার। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই সংগঠনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। পরে এই দুই শ্রেণির সদস্যদের অংশগ্রহণ বাদ দেওয়ার দাবিতে আদালতে রিট করেন মোহাম্মদ বেলাল নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি চট্টগ্রাম গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক। গত ২২ অক্টোবর রিট শুনানির পর হাইকোর্ট ওই দুই শ্রেণিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন পরিচালনার নির্দেশনা দিয়ে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে ৪ সেপ্টেম্বরের চিঠির ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আপিলে যায়।
গত ৩০ অক্টোবর আপিল শুনানির পর আদালত দুই সপ্তাহের জন্য নির্বাচন স্থগিত করেন এবং সমস্যা নিরসনের জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে নির্দেশ দেন। সর্বশেষ গত ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া এক আদেশে বলা হয়, চেম্বারের নির্বাচনে ছয়টি টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণির ছয়জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে পাল্টা আপিল করেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বেলাল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, তাদের নথিপত্র সঠিক নয়। তবু তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের সব কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আদালতে আমাদের আইনজীবীর বক্তব্য যথাযথভাবে আমলে নেওয়া হয়নি। সে কারণেই রায় চ্যালেঞ্জ করে আপিল করা হয়েছে।’
দীর্ঘ এক যুগ পর চট্টগ্রাম চেম্বারে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ এখানে ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর সব কমিটি গঠিত হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এবারের নির্বাচন ঘিরে দুটি প্যানেলও ঘোষণা করা হয়েছিল। একটি বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম নুরুল হকের নেতৃত্বে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ এবং অন্যটি এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমিরুল হকের নেতৃত্বে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরাম।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দুই প্যানেলই চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে সমাবেশসহ নানা কার্যক্রমে সক্রিয় ছিল। তবে নির্বাচন আদালতে গড়ানোর পর এসব কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে চেম্বারের নির্বাচন কার্যক্রম।
প্রাথমিক ভোটার তালিকা অনুযায়ী, চেম্বারে ভোটার প্রায় সাত হাজার। দুই পক্ষ থাকলেও চলমান অচলাবস্থা নিয়ে উভয় পক্ষই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের দলনেতা ও প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, আদালতের রায়ের পর বিষয়টি চেম্বারকে জানানো হয়েছে। তবে এখনো নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচন হচ্ছে, চেম্বারের নির্বাচন নিয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
আদালতের আদেশের পর চেম্বারের নির্বাচন বোর্ডের প্রধান মনোয়ারা বেগম জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী, মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বৈঠক হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন বোর্ডের সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরীফ উদ্দিন।