ডলার–সংকটে এক বছরে বিদেশি ফল আমদানি কমেছে ২৭%

বিদেশি ফলের আমদানি কমার ফলে দেশীয় ফলের বাজার বাড়ছে। একজন বিক্রেতা বলেছেন, এক কেজি আপেলের দামে ভালো মানের তিন থেকে চার কেজি আম পাওয়া যাচ্ছে।

দেশে ডলার-সংকট দেখা দেওয়ায় গত বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরে ফল আমদানিতে ঋণসুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে আমদানিকারকদের নগদ টাকায় ফল আমদানি করতে হচ্ছে। এতে গত অর্থবছরে তার আগের বছরের তুলনায় বিদেশি ফলের আমদানি কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে বিদেশি ফল এসেছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) বিদেশি ফল আমদানি হয়েছিল ৮ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ টন। অর্থাৎ, সর্বশেষ অর্থবছরে দেশে ফল আমদানি কমেছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৫২ টন বা ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

আমদানি করা ফলের মধ্যে শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে কম এসেছে আপেল ও আঙুর। গত অর্থবছরে এই দুই ধরনের ফল আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ কম এসেছে। শুকনা ও তাজা কমলা কম এসেছে ২৫ শতাংশ। ম্যান্ডারিন (ছোট কমলা) কম এসেছে ১৬ শতাংশ। অন্যান্য ফলের (মাল্টা, নাশপাতি, নাগ ফল, আনার ইত্যাদি) আমদানি কম হয়েছে ৩৭ শতাংশ।

আমদানিকারকেরা বলছেন, সরকার ফল আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের পর থেকে ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিল। শেষ হওয়া অর্থবছরের শুরু থেকে আমদানি কমতে থাকে। এ ছাড়া ডলারের বাড়তি দামের কারণেও ফলের দাম বেশি। এর ফলে মূল্যস্ফীতির চাপেও বিদেশি ফলের চাহিদা কিছুটা কমেছে।

ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের ওপর চাপ কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি ফল আমদানিতে নানা শর্ত আরোপ করার ফলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে বিদেশি ফল আমদানি কমার কারণে দেশীয় ফলের বাজার বাড়ছে। কৃষকেরা যেমন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন, তেমনই কিছু আমদানিকারক বিদেশি ফলের ব্যবসা কমিয়ে এখন দেশীয় ফলের ব্যবসায় ঝুঁকছেন।

রাজধানীর বাদামতলী ফলের আড়তের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি কমে যাওয়ায় তাঁদের ব্যবসা স্বাভাবিকভাবেই কমেছে। ডলারের বাড়তি দাম ও আমদানি কমার কারণে বাজারে ফলের দাম ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে একটা সময় ডলারের বাজারে অস্থিরতা অনেক বেশি থাকায় ফলের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি পড়ছিল। তখন অনেক আমদানিকারক বড় ক্ষতির শঙ্কায় আমদানি বন্ধ করেছিলেন।

তবে ফল আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো গত বছরের তুলনায় এখন ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, ভারত, ভুটান, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মিসর, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ফল আমদানি করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খেজুর আমদানিও বেড়েছে। বিদেশি এসব ফলের সিংহভাগ আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই।

সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিদেশি ফলের চাহিদা বেশি থাকে। কারণ, এ সময়ে দেশীয় ফলের সরবরাহ থাকে কম। আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, তরমুজের মৌসুমে অবশ্য বিদেশি ফলকে হটিয়ে একচেটিয়া রাজত্ব চালায় দেশীয় সুস্বাদু এসব ফল। এবার বাজারে দেশি ফলের সরবরাহ বেশ ভালো এবং দামও বেশির ভাগ ক্রেতার নাগালের মধ্যে।

কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া ফল বিতানের স্বত্বাধিকারী মো. মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, এক কেজি আপেলের দামে এখন ভালো মানের তিন থেকে চার কেজি আম পাওয়া যাচ্ছে। তাই মানুষ এখন দেশি ফলই বেশি কিনছেন।