এবারও বাড়তি দামে কিনতে হবে ঈদের পোশাক

কাপড়সহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম ১০-১৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরও পোশাকের দাম ৫ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছিল।

ঈদের কেনাকাটা এখনো পুরোপুরি জমেনি। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বিপণিবিতানে ক্রেতাদের আনাগোনা ততই বাড়ছে। তবে গতবারের চেয়ে এবার বেশি দামেই ঈদ পোশাক কিনতে হবে ক্রেতাদের। কারণ, ইতিমধ্যে গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম ১০-১৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরও পোশাকের দাম ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল।

বুটিক হাউস ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডের কয়েকজন উদ্যোক্তা জানালেন, গত এক বছরে পোশাকের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়, সরঞ্জামের দাম ও শ্রমিকের মজুরি—সবকিছুই বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রয়কেন্দ্রের খরচও বেড়ে গেছে। ফলে সব প্রতিষ্ঠানই বাধ্য হয়ে পোশাকের দাম বাড়িয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে দাম বেড়েছে ভিন্ন ভিন্ন।  

পবিত্র ঈদুল ফিতরে নতুন পোশাকের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি থাকে। বিশেষ করে শবে বরাতের পর থেকে পাইকারি বাজার জমে ওঠে। খুচরা পর্যায়ে রোজার শুরু থেকে বিক্রি বাড়ে, আর শেষ দিকে ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। তবে দেশে ঈদকেন্দ্রিক কত কোটি টাকার পোশাক বেচাকেনা হয়, তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই।

গত শুক্রবার ও শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ও বেইলি রোডের বুটিক হাউস ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, শুধু শীর্ষস্থানীয় দু-তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্রেই ক্রেতাদের মোটামুটি ভিড়। অন্য প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্রে তেমন কোনো ক্রেতা নেই। আগামী সপ্তাহ থেকে ঈদের কেনাকাটা পুরোপুরি জমে উঠবে—এমনটাই জানালেন বিক্রেতারা।

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বুটিক হাউস রঙ বাংলাদেশের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২৩টি। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সৌমিক দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাপড়ের দাম, শ্রমিকের মজুরি, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ সবকিছুর দামই বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের সামর্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দাম যতটা না বাড়ালেই নয় ততটা বাড়াচ্ছি। পোশাকের দাম নির্ধারণে রীতিমতো গবেষণা করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, পোশাকের দাম ১০-১৫ শতাংশ বেড়েছে। কিছু পোশাকে হয়তো সেটা ২০ শতাংশ হতে পারে।

সৌমিক দাশ আরও বলেন, ‘ঈদের বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বেচাবিক্রি বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছি। ঈদের বিক্রির ওপর আমাদের মতো বুটিক হাউসের অনেক কিছু নির্ভর করছে। কারণ, করোনার ক্ষতি আমরা এখনো পুষিয়ে উঠতে পারিনি। প্রতিবছর একটু একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’

ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রুচির পরিবর্তন হওয়ায় ব্র্যান্ডের পোশাকের দিকেই এখন বেশি ঝুঁকছেন ক্রেতারা। ফলে গত এক দশকে বেশ কিছু পোশাকের ব্র্যান্ড গড়ে উঠেছে। তারা রাজধানীর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য শহরেও বিক্রয়কেন্দ্র খুলছে।

স্নোটেক্স গ্রুপের সহযোগী ব্র্যান্ড সারা লাইফস্টাইলের ঢাকা, রংপুরসহ অন্যান্য শহরে ১১টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাপড়ের দাম ১০-১৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে আমরা পোশাকের দাম বাড়িয়েছি ১০-১২ শতাংশ। কারণ, গত এক বছরে আমাদের বিক্রয়কেন্দ্র বেড়েছে ৪টি। তাতে উৎপাদনও বেড়েছে। সে জন্যই কাপড়ের দাম যে হারে বেড়েছে, তার তুলনায় পোশাকের দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে।’

বুটিক হাউস ও ফ্যাশন ব্র্যান্ড ছাড়াও নন–ব্র্যান্ড, শহরের ফুটপাত ও গ্রামগঞ্জে বিপুল পরিমাণ পোশাক বিক্রি হয়। এসব পোশাকের কাপড়ের বড় একটি অংশের জোগান দেয় দেশের বস্ত্রকলগুলো।

দেশের বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএ জানায়, বাংলাদেশের বার্ষিক পোশাক, বস্ত্র ও হোম টেক্সটাইলের বাজারের আকার ৮০০ কোটি ডলার বা ৮৪ হাজার কোটি টাকার সমান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কেনাবেচা হয় পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময়ে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, বস্ত্রকলগুলো স্থানীয় বাজারের শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রিপিসের চাহিদার বড় অংশ মেটায়। গত কয়েক মাসে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও রাসায়নিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাপড়ের ডায়িং–ফিনিশিংয়ে খরচ বেড়েছে ৩৫–৪০ শতাংশ। অন্যান্য খরচও বাড়তি। তাতে পোশাকের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন। তবে চাহিদা কম থাকায় ঈদপোশাকের দাম ১০-১৫ শতাংশ বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এরপরও এখনো ঈদের বেচাবিক্রি জমেনি।