গৃহস্থালি সামগ্রীর প্রতিই বেশি আগ্রহ ক্রেতাদের 

মেলার শুরুতে ক্রেতা-দর্শনার্থী কম থাকলেও এখন ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। বিক্রি নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও আশাবাদী বিক্রেতারা। 

বাণিজ্য মেলায় গৃহস্থালি সামগ্রীর দোকানে পণ্য দেখছেন আগ্রহী ক্রেতারা। গতকাল ঢাকার পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম দিকে উপস্থিতি কম থাকলেও দিন যত গড়িয়েছে, ততই ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। তাই বিক্রেতাদের মুখেও হাসি ফুটতে শুরু করেছে। বিশেষ করে মেলায় ক্রোকারিজ, পোশাক, জুতা, জুয়েলারি, খেলনাসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্যের স্টলে বেশি ভিড় করছেন ক্রেতারা। ফলে অন্যদের তুলনায় এসব পণ্যের বিক্রেতারা বেশি খুশি। 

মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবারের মেলার প্রথম ১৫ দিনে ক্রেতার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। চলতি সপ্তাহ থেকে দর্শনার্থী বাড়তে শুরু করেছে। মেলায় যাঁরা আসছেন, তাঁরা কিছু না কিছু কিনে ঘরে ফিরছেন। তাতে মেলার বাকি দিনগুলো ঘিরে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বিক্রেতারা। 

মেলায় গৃহসামগ্রী দেখছেন ক্রেতারা।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) ১ জানুয়ারি থেকে শুরু
হয়েছে বাণিজ্য মেলা। এবারের মেলায় দেশ-বিদেশের তিন শতাধিক স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। 

বাণিজ্য মেলার প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই হাতের ডানে ক্রোকারিজ সামগ্রীর একাধিক প্যাভিলিয়ন ও স্টল। মেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টির মতো ক্রোকারিজ সামগ্রীর স্টল রয়েছে। এ ছাড়া আছে একাধিক সবজি কাটার যন্ত্রের স্টল। গতকাল বুধবার বিকেলে এসব স্টলে গিয়ে দেখা যায়, অফিস-আদালত খোলার দিনেও সেখানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। প্রেশারকুকার, ফ্রাই প্যান, স্টেইনলেস স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। ৩০০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম এসব পণ্যের। তবে স্টলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা আরও বেশি ক্রেতা আশা করেছিলেন। 

হরেক রকমের কার্পেট দেখছেন ক্রেতারা।

দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, শেরেবাংলা নগরে যখন মেলা হতো, তখন অনেক বেশি বিক্রি হতো। এক গ্রাহক একাধিকবারও মেলায় আসতেন। পূর্বাচলে সেটা খুব কম হচ্ছে। এক গ্রাহক একবারের বেশি আসেন না। 

ক্রোকারিজ সামগ্রীর পাশাপাশি পোশাক, জুতা, জুয়েলারি ও বাচ্চাদের খেলনার স্টলগুলোতেও গতকাল ক্রেতা-দর্শনার্থীর বেশ ভালো উপস্থিতি দেখা গেছে। পোশাকের স্টলগুলোতে মেয়েদের থ্রি-পিস, শাড়ি, ওড়না, চাদর ও বাচ্চাদের পোশাক, কাঁথা, বেডশিট
ইত্যাদি গৃহস্থালি পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে যে দামে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তাতে সন্তুষ্ট নন অনেক বিক্রেতা। 

শেরেবাংলা নগরে যখন মেলা হতো, তখন অনেক বেশি বিক্রি হতো। এক গ্রাহক একাধিকবারও মেলায় আসতেন। পূর্বাচলে সেটা খুব কম হচ্ছে। এক গ্রাহক একবারের বেশি আসেন না।
আক্তারুজ্জামান, কর্মকর্তা, দিল্লি অ্যালুমিনিয়াম

জয়িতা ফাউন্ডেশনের স্টলে থাকা উদ্যোক্তা উম্মে ফাতেমা বলেন, একটু দামি পণ্য কেনার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ তুলনামূলক কম। ক্রেতারা যে দামে পণ্য কিনতে চান, সেই দামে অনেক পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হয় না। 

মেলায় জুতাসহ চামড়ার পণ্য বিক্রির দেশি-বিদেশি বেশ কিছু স্টল রয়েছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে তাদের কেউ দিচ্ছে বিশেষ মূল্যছাড়, আবার কেউ নিচ্ছে অন্য কৌশল। যেমন ভারতের দিল্লি থেকে আসা ইন্ডিয়ান ফুটওয়্যারের স্টলে সব ধরনের জুতায় রাখা হচ্ছে একই দাম। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী সনু চায়াল বলেন, আপনি যে জুতাই নেন, দাম একটাই, দেড় হাজার টাকা। প্রথম ১৮ দিনে ৫ হাজারের বেশি জুতা বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। 

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় তুরস্কের একটি স্টলে পছন্দের বাতি দেখছেন এক ক্রেতা। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার, পূর্বাচল, ১৮ জানুয়ারি
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

তিনতলাবিশিষ্ট প্রাণের প্যাভিলিয়নে পাঁচ শতাধিক পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশই গৃহস্থালি সামগ্রী। এ ছাড়া মেলায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের আরও সাতটি স্টল রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘মেলায় আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থী আসছেন। আর স্টলে আসা দর্শনার্থীরা কোনো না কোনো গৃহস্থালি সামগ্রী কিনছেন।’ 

তবে বেচাকেনা মোটামুটি ভালো হলেও মেলার অংশ নেওয়ার ‘মূল উদ্দেশ্য’ পূরণ হচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতাদের কেউ কেউ। ক্রোকারিজ সামগ্রী বিক্রির প্রতিষ্ঠান এসকেবি কুকওয়্যারের বিক্রয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক নাভিদ উল বারী বলেন, ‘বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানি গ্রাহক টানা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। এখন পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে সাত হাজার পিসের বেশি পণ্য বিক্রি করেছি। তবে রপ্তানির জন্য কোনো গ্রাহক এখনো পাইনি।’