ইলন মাস্ক থেকে ব্লু টিক, টুইটারের নতুন সিইও লিন্ডা ইয়াকারিনোর যত চ্যালেঞ্জ

ইলন মাস্ক ও লিন্ডা ইয়াকারিনো

অবশেষে সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে টুইটারের জন্য একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খুঁজে পেয়েছেন ইলন মাস্ক। তিনি হচ্ছেন এনবিসি ইউনিভার্সালের বিজ্ঞাপন বিভাগের সাবেক প্রধান লিন্ডা ইয়াকারিনো। অতি সম্প্রতি তিনি এনবিসি ছেড়েছেন। গতকাল শুক্রবার ইলন মাস্ক নিজেই টুইট করে এ খবর জানিয়েছেন। খবর বিবিসির

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইলন মাস্ক বলেছিলেন, ‘টুইটারের নতুন সিইও পাওয়া গেছে।’ তবে সেদিন তিনি নাম প্রকাশ করেননি।

টুইটে ইলন মাস্ক লিখেছেন, ‘টুইটারের নতুন সিইও হিসেবে লিন্ডা ইয়াকারিনোকে স্বাগত জানাতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।’ সেই সঙ্গে লিন্ডাকে টুইটারে কী কাজ সামলাতে হবে, তা-ও টুইটে পরিষ্কার করে লিখে দিয়েছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক। তিনি জানিয়েছেন, লিন্ডা আপাতত ব্যবসায়িক দিক দেখাশোনা করবেন, ইলন মাস্ক নিজে সামলাবেন প্রযুক্তিগত দিক।

তবে টুইটারে লিন্ডা ইয়াকারিনোর জীবন খুব একটা স্বস্তিতে কাটবে না, তা বলাই বাহুল্য। ইলন মাস্ক টুইটারের নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার পর যত কাণ্ড করেছেন, সেই বাস্তবতায় লিন্ডার সামনে পর্বতপ্রমাণ চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, লিন্ডার প্রথম কাজ হচ্ছে ইলন মাস্কের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। টুইটারের তিনি সিইও হিসেবে যোগ দিলেও ইলন মাস্ক টুইটারের নিয়ন্ত্রণ একেবারে ছেড়ে দিচ্ছেন না। চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি থাকবেন। সেই সঙ্গে কোম্পানির প্রযুক্তিগত দিকও তিনি সামলাবেন।

টেসলা ও স্পেসএক্সের চেয়ে টুইটারেই বেশি সময় দেবেন ইলন মাস্ক। ফলে লিন্ডা ইয়াকারিনোর ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার প্রথম পরীক্ষা হবে ইলন মাস্ককে সামলানো, তাঁর সঙ্গে কাজের সম্পর্ক গড়ে তোলা।

লিন্ডা মূলত টুইটারের ব্যবসায়িক দিকটা সামলাবেন, ইলন মাস্ক টুইট করেই তা বলেছেন। বিজ্ঞাপনই টুইটারের আয়ের মূল জায়গা। ২০২১ সালে কোম্পানির রাজস্ব আয় হয়েছিল ৫১০ কোটি ডলার, এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ছিল বিজ্ঞাপনী আয়। কিন্তু মাস্কের খ্যাপাটে কর্মকাণ্ডের কারণে টুইটারের বিজ্ঞাপনী আয় অনেকটাই কমে গেছে। সেই সঙ্গে টুইটারে অযথাযথ কনটেন্ট বা আধেয়জনিত সমস্যা আছে; অর্থের বিনিময়ে দেওয়া ব্লু টিকও আরেক সমস্যা।

মাস্ক নিজেই আশঙ্কা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে টুইটারের আয় ৩০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে। এ বাস্তবতায় বিজ্ঞাপনদাতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা লিন্ডার বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

টুইটার এখনো মুনাফার মুখে দেখেনি, অথচ ইলন মাস্ক টুইটারের নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের ঋণের দায়ও পেয়েছেন। যে কারণে মাসে ৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয় টুইটারকে। এ বাস্তবতায় ইলন মাস্ক টুইটারের বার্ষিক ব্যয় ৪৫০ কোটি ডলার থেকে ১৫০ কোটি ডলারে নামিয়ে এনেছেন। তা সত্ত্বেও এত ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কোম্পানিকে টিকিয়ে রাখতে উল্লেখযোগ্য হারে মুনাফা করতে হবে টুইটারকে, যে দায়িত্ব লিন্ডার হাতেই।

বিজ্ঞাপন থেকে আয় কমে যাওয়ার পর ইলন মাস্ক মাসে ৮ ও ১১ ডলারের বিনিময়ে টুইটারের সাবস্ক্রিপশন চালু করেছেন। এখন পর্যন্ত ২৫ কোটি গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ৬ লাখ থেকে ৬ লাখ ৩৫ হাজার গ্রাহক এই সেবা নিচ্ছেন। এতে মাসে আয় হচ্ছে মাত্র ৫০ লাখ ডলার। যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন তাঁরা হারিয়েছেন, সেই তুলনায় এটা নগণ্য। ফলে লিন্ডার আরেক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থের বিনিময় সাবস্ক্রিপশন বাড়ানো।

সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও সামলাতে হবে লিন্ডাকে। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী শাখা ইউরোপীয় কমিশন মাস্ককে সতর্ক করে দিয়েছে যে টুইটার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল সেবা আইনের লঙ্ঘন করছে। সেই সঙ্গে তাঁকে যুক্তরাজ্যের অনলাইন নিরাপত্তা আইনও মেনে চলতে হবে।

ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা দিতে সক্ষম হচ্ছে কি না টুইটার, তা-ও এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের আতশ কাচের নিচে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে সামাল দেওয়াও হবে লিন্ডা ইয়াকারিনোর জন্য আরেক বড় চ্যালেঞ্জ।

এদিকে জানা গেছে, টুইটারের পরবর্তী সিইও হওয়ার দৌড়ে লিন্ডা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনের নাম ছিল। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ইয়াহুর সাবেক সিইও মরিসা মায়ার, ইউটিউবের সাবেক সিইও সুজান ওয়াজসিকি, মাস্কের স্টার্টআপ সংস্থা নিউরালিঙ্কের প্রধান নির্বাহী শিভন জিলিস প্রমুখ। ইলনের মহাকাশযান গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের প্রেসিডেন্ট গুয়েন শটওয়েল ও টেসলার চেয়ারম্যান রবিন ডেনহোমও এই দৌড়ে ছিলেন।

কিন্তু শেষমেশ নিয়োগ পেলেন লিন্ডা ইয়াকারিনো। গত মাসেই মিয়ামিতে ইলন মাস্কের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। সেখানে লিন্ডার সঙ্গে আলাপের পরই মাস্ক তাঁকে টুইটারের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন বলেও জানা যায়।