রাজধানীর পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসর। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের পণ্যে সাজিয়েছে স্টল ও প্যাভিলিয়ন। বরাবরের মতো এবারের মেলায়ও অংশ নিয়েছে দেশের প্রথম সারির প্রায় সবগুলো ফার্নিচার নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান।
বাণিজ্যমেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থী এবং ফার্নিচারপ্রেমিদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে ‘প্রিমিয়ার স্টল-৪৩’। দৃষ্টিনন্দন এই স্টলটি দেশের শীর্ষস্থানীয় আসবাব উৎপাদন, সরবরাহকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স ফার্নিচারের। অফিস-ফার্নিচার থেকে শুরু করে বাসা-বাড়ি, হাসপাতাল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালসহ বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবপত্রের সমাহার রয়েছে স্টলটিতে। এ যেন ‘এক ছাদের নিচে সব ফার্নিচার’। শুধু বাণিজ্যমেলায় নয়, যাত্রার শুরু থেকেই দেশের আসবাবপত্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেড।
‘ভাই ভাই ফার্নিচার’ থেকে ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেড
সময়টা সত্তর দশকের মাঝামাঝি। ঢাকার গুলশানের কেন্দ্রস্থলে মো. হাবিবুর রহমান সরকারের হাত ধরে একটি সাধারণ আসবাবপত্রের দোকান যাত্রা শুরু করে। নাম ছিল ‘ভাই ভাই ফার্নিচার’। ক্রেতা-চাহিদা এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৯৮০ সালে ব্যবসা বড় করার সিদ্ধান্ত নেন ভাই ভাই ফার্নিচারের কর্ণধার মো. হাবিবুর রহমান সরকার। ছোট ভাই ইলিয়াছ সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ‘ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেড’ নামে শুরু হয় নতুন যাত্রা। যা পরবর্তীতে দুই ভাইয়ের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেশের অন্যতম শীর্ষ ফার্নিচার ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সরকারের পুত্র শরিফুজ্জামান সরকার ব্রাদার্স ফার্নিচারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
বৈচিত্র্যময় ফার্নিচারের সমাহার
পণ্যের বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে ব্রাদার্স ফার্নিচারের রয়েছে নিজস্বতা ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে বিশাল সমাহার। লিভিং রুম আসবাবপত্রের মধ্যে রয়েছে সোফা-সেট, টি-টেবিল, বুক শেলফ এবং শোকেসসহ বিভিন্ন ধরনের আধুনিক এবং ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনের পণ্য। বেডরুম আসবাবপত্রের সংগ্রহে আছে ডাবল এবং সিঙ্গেল বেড, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ার্ডরোব এবং বেডসাইড টেবিলের মতো ফাংশনাল এবং স্টাইলিশ আসবাব। ডাইনিং রুমকে আকর্ষণীয় করে তুলতে আছে ডাইনিং টেবিল, চেয়ার এবং কেবিনেটের মতো টেকসই এবং মার্জিত ডিজাইনের পণ্য। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রকে নান্দনিক করে তুলতে আছে অফিস ডেস্ক, চেয়ার, ফাইল ক্যাবিনেট এবং কনফারেন্স টেবিলের মতো পেশাদার পরিবেশের জন্য উপযুক্ত আসবাবপত্র।
ব্রাদার্স ফার্নিচারের বিশেষত্ব
নকশায় আধুনিকতা এবং স্থানীয় ঐতিহ্যের মিশ্রণ থাকায় ব্রাদার্স ফার্নিচারের প্রতিটি পণ্যই রুচিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী। ব্র্যান্ডটির আসবাবপত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, পণ্য তৈরির সময়ই গুণমান নিশ্চিত করা। আসবাব তৈরিতে উচ্চমানের কাঠ যেমন মেহগনি, জার্মানির বিচ কাঠ এবং স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা অন্যান্য কাঠ ব্যবহৃত হয়। কাঠগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংরক্ষিত করা হয়, যাতে আসবাব টেকসই এবং নান্দনিকতায় পূর্ণ থাকে। এ ছাড়া কাঠের সঙ্গে লোহা ও গ্লাসের ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক ডিজাইন তৈরি করা হয়, যা পরিচয় দেয় আভিজাত্যের। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে গ্রাহক-চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ডিজাইন’(Scandinavian Design) এবং ‘বেন্ট প্রোডাক্ট’ (Bent Product) সংবলিত ফার্নিচারগুলো। এ ছাড়া ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে পছন্দের ডিজাইন ও আকার অনুযায়ী আসবাব তৈরি করে দেওয়ার ব্যবস্থাও রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই নীতি
পরিবেশবান্ধব নীতিমালা অনুসরণ করে আসবাবপত্র উৎপাদন করে ব্রাদার্স ফার্নিচার। যেখানে টেকসই কাঠের ব্যবহার, পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি অর্জন করেছে এফএসসি এবং আইএসও ৯০০১-২০১৫ সনদ।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যাত্রা
দেশের বাজারে অর্জিত সুনাম সঙ্গে নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে ব্রাদার্স ফার্নিচার। এরই মধ্যে কানাডা ও ভারতে প্রতিষ্ঠানটির পণ্যগুলো সমাদৃত হয়েছে। বাংলাদেশের আসবাবশিল্পকে বৈশ্বিক বাজারে তুলে ধরার লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ও ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এগিয়ে চলছে ব্রাদার্স
দেশজুড়ে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিভাগীয় এবং জেলা শহর মিলিয়ে ৪৫টি শো-রুম রয়েছে ব্রাদার্স ফার্নিচারের। এ ছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সারা দেশে ডেলিভারি সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। সাভারের বিরুলিয়ায় ৪৫ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত ব্রাদার্সের কারখানা। করপোরেট অফিস এবং শো-রুমে কাজ করছে সাত শতাধিক জনবল।
অর্জন ও স্বীকৃতি
‘বেস্ট ভ্যাট অ্যাওয়ার্ড’সহ ব্রাদার্স ফার্নিচারের রয়েছে দেশীয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিভিন্ন অর্জন। এ ছাড়া বাংলাদেশের ফার্নিচার খাতে অবদান রাখায় দুবার ‘বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড’সহ প্রতিটি বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘সেরা স্টলে’র পুরস্কার জিতেছে ব্রাদার্স ফার্নিচার।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দৃষ্টিনন্দন স্টল
এবারের মেলায় শতাধিক নতুন ও বিশ্বমানের ফার্নিচার নিয়ে এসেছে ব্রাদার্স ফার্নিচার, যা দৃশ্যমান রয়েছে স্টলে। ফার্নিচারের বাজারে নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় রং প্রচলিত আছে। তবে ব্রাদার্স ফার্নিচার সব সময় সময়োপযোগী ধারা ও স্টাইলকে মাথায় রেখে ফার্নিচার ডিজাইন করে। পাশাপাশি ফার্নিচারে আধুনিক ও রুচিশীল রঙের ব্যবহার করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বাণিজ্য মেলায় ব্রাদার্সের ফার্নিচারে নতুন ‘এনটিক কালারে’র ফার্নিচার প্রদর্শন করা হয়েছে। যা দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ার পাশাপাশি ব্রাদার্স ফার্নিচারের প্রিমিয়ার স্টলকে করেছে অন্যদের চেয়ে আলাদা।
অফার, মূল্যছাড় ও বিক্রয়োত্তর সেবা
ব্রাদার্স ফার্নিচারের পণ্যে রয়েছে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়। সেই সঙ্গে রয়েছে মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের এয়ার টিকিট জেতার সুযোগ। সম্প্রতি ব্রাদার্স ফার্নিচার যুক্ত করেছে পণ্য ক্রয়ে ‘পয়েন্টিং সিস্টেম’। ব্রাদার্সের আসবাব কিনলেই পণ্যভেদে নির্দিষ্ট পয়েন্ট যুক্ত হবে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে। পয়েন্টগুলো ক্যাশ করে পরবর্তীতে পছন্দের পণ্য কেনার আকর্ষণীয় সুযোগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ক্রেতাদের জন্য ব্রাদার্স ফার্নিচারের পণ্যে দুই ধরনের বিক্রয়োত্তর সেবা রয়েছে—প্রস্তুতকৃত ত্রুটি বা ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্টের জন্য এক বছরের ওয়ারেন্টি এবং ঘুণে ধরাজনিত সমস্যায় পাঁচ বছরের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি।
এ ছাড়া বাণিজ্য মেলা বা নিকটস্থ শো-রুম থেকে ক্রয়কৃত পণ্য সঠিক সময়ে গ্রাহকদের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়। স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটার জন্য ক্রেতারা পাবেন বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিনা সুদে ইএমআই সেবা।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ এবং ব্রাদার্স ফার্নিচারের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক মো. রাশেদুল আহসান রুবেল বলেন, ‘এ মেলা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ব্রাদার্স প্রতি বছরই গ্রাহকের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে নিজেদের ভান্ডারে নতুন ফার্নিচার যোগ করে। আর সেগুলোকে বাণিজ্য মেলায় প্রদর্শনের মাধ্যমে সবার সঙ্গে পরিচিত করায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফলে নতুন পণ্যগুলোতে গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তাই এবারও প্রত্যাশা থাকবে, গ্রাহকেরা যেন ফার্নিচার নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশার কথা আমাদের জানান।’