এবার গরমমসলার বাজার চড়া, কমেছে বিক্রি

পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণেই খুচরা দোকানেও গরমমসলার দাম বাড়তি, এমন দাবি ছোট দোকানিদের।

রাজধানীর অন্যতম দুই পাইকারি মোকাম মৌলভীবাজার ও কারওয়ান বাজারে গত জুলাই মাসে মানভেদে প্রতি কেজি জিরা ৩৮০ থেকে ৪১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই জিরার কেজি এখন ৫০০ টাকার ওপরে। শুধু জিরাই নয়, দারুচিনি, লবঙ্গ ও এলাচির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য মসলার দামও গত চার-মাস মাসে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি বাজারে মসলার মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।

রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা মসলা ব্যবসায়ীদের কথায়ও একই সুর। গত মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের আমদানিকারক-পাইকারি ব্যবসায়ী আলাপকালে বলেন, সাধারণত পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে প্রতিবছর গরমমসলার বাজারে কিছুটা অস্থিরতা দেখা গেলেও গত কোরবানির ঈদে তেমনটি হয়নি। তবে মার্কিন ডলারের দাম যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি জাহাজভাড়াসহ সব ধরনের খরচও বেড়ে গেছে। এ জন্য কয়েক মাস ধরে পাইকারি বাজারে মসলার দাম ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণেই খুচরা দোকানেও গরমমসলার দাম বাড়তি, এমন দাবি ছোট দোকানিদের। 

ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিয়ে জটিলতা চলছে। ডলারের বিনিময় হারে অস্থিরতার কারণে মসলা আমদানির খরচ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সে জন্য এখন বাজারে মসলার দাম সমন্বয় হচ্ছে।
এনায়েত উল্লাহ, সভাপতি, বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতি

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিয়ে জটিলতা চলছে। ডলারের বিনিময় হারে অস্থিরতার কারণে মসলা আমদানির খরচ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সে জন্য এখন বাজারে মসলার দাম সমন্বয় হচ্ছে। ঋণপত্র খোলার ব্যাপারে ব্যাংকগুলো এখনই সহযোগিতা না করলে ব্যবসায়ীরা চাপে পড়ে যাবেন। আর আমদানি একেবারে কমে গেলে বাজারে সেটারও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকায়ও গরমমসলার মূল্যবৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, বাজারে এখন প্রতি কেজি জিরা ৫০০ থেকে ৫৭০ টাকা, দারুচিনি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ছোট এলাচি ১ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, ধনে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা ও তেজপাতা ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। 

টিসিবি বলছে, বাজারে গত এক মাসে প্রতি কেজি জিরায় ৮ শতাংশ, দারুচিনিতে ১৪ শতাংশ, লবঙ্গে ৬ শতাংশ, ছোট এলাচি ২ শতাংশ, ধনে ১০ শতাংশ ও তেজপাতায় ৪০ শতাংশ দাম বেড়েছে। 

অন্যদিকে রাজধানীর মসলা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত চার-পাঁচ মাসে জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গের দাম কেজিতে অন্তত ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। ছোট এলাচির দাম বেড়েছে আরেকটু বেশি। এ ছাড়া ধনে ও তেজপাতার দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।

তবে বাজারে গরমমসলার দাম বাড়তি হলেও এখন পর্যন্ত সরবরাহে বড় কোনো সংকট হয়নি। ক্রেতারা কিনতে চাইলেই মসলা পাচ্ছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হওয়ার পর মসলার কেনাকাটা কমেছে।   

জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের পাইকারি মসলা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হেদায়েত অ্যান্ড ব্রাদার্সের কর্মকর্তা বিলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাম বাড়তে থাকায় মসলা বেচাকেনা কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো বড় কোনো সংকট তৈরি হয়নি। যেহেতু মসলা অনেকটা আমদানিনির্ভর, সে ক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলার ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকতে হবে।

টিসিবির তথ্য বলছে, বাজারে গরমমসলার পাশাপাশি আমদানি করা মসলাজাতীয় অন্যান্য পণ্যের দামও এখন বাড়তি। যেমন বাজারে এখন প্রতি কেজি আদা ১৪০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে এটির দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে। গত এক মাসে রসুন আর শুকনা মরিচ দুটোরই দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ।  

অবশ্য দেশি শুকনা মরিচের দামও বাজারে বাড়তি। এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। গত এক বছরে আমদানি করা ও দেশি উভয় ধরনের শুকনা মরিচের দাম অনেকটা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এক বছরে দেশি শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে ১১৪ শতাংশ। আমদানি করা শুকনা মরিচের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় ৭৩ শতাংশ। 

তবে বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম। নতুন পেঁয়াজ আসার ফলে দেশি ও আমদানি করা উভয় পেঁয়াজের দাম কমেছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের প্রতি কেজি দাম পড়ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। দেশি রসুনের দামও সহনীয়। প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হলুদের দামেও বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।