রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায়ীদের চিন্তায় ফেলেছে

কয়েক দিন ধরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। বিশেষ করে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় মারা গেছেন একজন। এ ঘটনার প্রভাব পড়েছে ঢাকাসহ সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। কথা বলেছেন ফয়জুল্লাহ।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আজ ঢাকা অনেকটা থমথমে ছিল। এই পরিস্থিতি ব্যবসা-বাণিজ্যে কী প্রভাব ফেলেছে?

হেলাল উদ্দিন: শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এর প্রভাব পড়েছে। ঢাকাতে বিষয়টি দৃশ্যমান ছিল বেশি। তবে অন্যান্য স্থানেও ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটা থমথমে ছিল। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সবার মধ্যে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয়। তাতে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। কিন্তু দোকানপাট বন্ধ রাখতে হলে ব্যবসায়ীদের রুটিরুজিতে টান পড়ে। সুতরাং আমরা চাই, কোনোভাবেই এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হোক, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যা হয়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: যেহেতু সামনে নির্বাচন, মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক নানা কর্মকাণ্ড থাকবে। সে ক্ষেত্রে আপনাদের বক্তব্য কী?

হেলাল উদ্দিন: রাজনীতি দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। সুতরাং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকবেই। যে যার মতো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে, সেটাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে দোকানপাট বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনধারণের ওপর প্রভাব পড়ে। সে জন্য দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে, এমন কোনো পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রধান দুটি দল দেশে রাজনৈতিকভাবে বেশি সক্রিয়, তাদের দেশ শাসনেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে। আশা করি, সবাই জনগণের স্বার্থে, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সামগ্রিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি এখন কেমন?

হেলাল উদ্দিন: করোনাকালে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। পুরো অর্থনীতিতে একধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় আছেন। সাধারণত শীত মৌসুমে ভালো ব্যবসা হয়। ব্যবসায়ীরা কিছুদিন ধরে সেই সময়টা পার করছিলেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক পরিবেশের অস্থিরতা কিছুটা হলেও ব্যবসায়ীদের চিন্তায় ফেলেছে। তবে এখনো পরিস্থিতি অতটা খারাপ বলা যাবে না। উদ্বেগ থাকলেও আশা করছি, বড় ধরনের কোনো ক্ষতির মধ্যে ব্যবসায়ীদের পড়তে হবে না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা দেখছেন কি?

হেলাল উদ্দিন: এখনই আলোচনা করার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে আমরা সার্বিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি। ব্যবসায়ীদের বলেছি, আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে। ব্যবসার কোনো ক্ষতি হোক, তা আমরা চাই না। কারণ, গত কয়েকটা উৎসবে প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা হয়নি। আর রাজনৈতিক নেতাদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে দেশে ৫৬ লাখ ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, এগুলো টিকিয়ে রাখতে না পারলে মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। সেটা নিশ্চয় তাঁরা চান না।