বঙ্গবন্ধু টানেল রক্ষণাবেক্ষণে ৩৫% অর্থ খরচ ডলারে

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের কাজ পেয়েছিল চীনা কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)। প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করার কথা ৯৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি চায় মার্কিন ডলারে অর্থ নিতে।

এ পর্যায়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে আজ বুধবার সিদ্ধান্ত হয়েছে ৩৫ শতাংশ অর্থ প্রতিষ্ঠানটিকে ডলারে পরিশোধ করবে সরকার। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চু৵য়ালি এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের সভার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

সাঈদ মাহবুব খান বলেন, টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান সিসিসিসিকে বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে ৬৫ শতাংশ বা ৬৫৭ কোটি টাকা। আর বাকি ৩৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করা হবে মার্কিন ডলারে। পরিমাণ ৩ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার ৯৪০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩২৭ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, চীনা প্রতিষ্ঠানটিকে এখনই কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। ভবিষ্যতে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। টানেলটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানটিকে বেশ কিছু কেনাকাটা করতে হবে। এসব কেনাকাটা ডলারে করা হবে। তাই প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রাপ্য অর্থের একটি অংশ ডলারে পরিশোধের অনুরোধ জানায় সরকারকে।

বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের এ সময়ে ৩৫ শতাংশ অর্থ ডলারে পরিশোধ করতে কমিটি রাজি হলো কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ মাহবুব খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না।’
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম এ টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। তবে সংযোগ সড়কসহ টানেলের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। প্রকল্পটির ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে।

আগামী মাসে টানেলের একটা অংশ উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। এ টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট সময় লাগার কথা। চট্টগ্রামে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে টানেলটি নদীর তলদেশ দিয়ে চলে গেছে আনোয়ারার চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা এবং কর্ণফুলী সার কারখানার মাঝামাঝি জায়গায়।
প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে সরকারি কোষাগার থেকে। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা চীন সরকারের ঋণ, যা ২০ বছর মেয়াদে শোধ করতে হবে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এ টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ ছাড়া ক্রয় কমিটির বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কানাডা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টন সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এতে মোট খরচ হবে ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।

ক্রয় কমিটির পাশাপাশি গতকাল অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এতে কাতারে অনুষ্ঠেয় ফিফা বিশ্বকাপের প্রচারস্বত্ব সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে তমা কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে কেনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তমা থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন কিনবে এ স্বত্ব।
অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। আরও পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।