আদা আমদানি ৫৮ টাকায়, বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়

বাজারে এখন যত আদা বেচাকেনা হচ্ছে, তার ৮০ শতাংশই মিয়ানমারের। গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দাম ছিল কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা।

বাজারে আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে
প্রথম আলো

প্রায় এক মাস ধরে চীন থেকে আদা আমদানি বন্ধ। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকেও আমদানি হচ্ছে কম। আদা আসছে মূলত এখন মিয়ানমার থেকে। বাজারে এখন যত আদা বেচাকেনা হচ্ছে, তার ৮০ শতাংশই মিয়ানমারের আদা। এই আদার আমদানি মূল্য পড়ছে প্রতি কেজি ৫৮ টাকা। হাতবদলের পর খুচরায় এখন এই আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।

টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসের ২২ দিনে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ৩১ জন ব্যবসায়ী ১ হাজার ৮১৭ টন আদা আমদানি করেছেন। এসব আদার কেজিপ্রতি গড় আমদানিমূল্য ছিল ৪৫ সেন্ট বা ৪৮ টাকা। শুল্ক–কর দিতে হয়েছে কেজিপ্রতি প্রায় ১০ টাকা। এই হিসাবে কেজিপ্রতি আমদানি মূল্য পড়েছে ৫৮ টাকা।

মিয়ানমার থেকে এক চালানে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ডলারের নিত্যপণ্য ও প্রায় ৩০ হাজার ডলারের বিবিধ পণ্য আমদানি করা যায়। এই সীমার মধ্যে পণ্য বেশি আমদানি করতে মূলত আমদানি মূল্য কম দেখানো হচ্ছে।
মো. ওমর ফারুক, দুই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার

মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আদা গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা। পাইকারি বাজার ঘুরে হাতবদল হয়ে খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। অর্থাৎ আমদানি মূল্যের প্রায় পাঁচ গুণ বেশি দামে খুচরায় আদা বিক্রি হচ্ছে।

মিয়ানমার থেকে আদা আমদানিতে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান রাফা ট্রেডার্স ও ফারুক ট্রেডার্স। দুই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমার থেকে এক চালানে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ডলারের নিত্যপণ্য ও প্রায় ৩০ হাজার ডলারের বিবিধ পণ্য আমদানি করা যায়। এই সীমার মধ্যে পণ্য বেশি আমদানি করতে মূলত আমদানি মূল্য কম দেখানো হচ্ছে।

মো. ওমর ফারুক আরও বলেন, সোনালী ব্যাংক ও এবি ব্যাংকে ফরেন ড্রাফটের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি করা হয়। ব্যাংকগুলো ডলার–সংকটের অজুহাতে আদা আমদানি বাড়ানো যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো যদি সহযোগিতা করে, তাহলে মিয়ানমার থেকে প্রতি কেজি আদা ৮০ টাকায় কেনা সম্ভব। শুল্ক–কর ও পরিবহন খরচসহ আমদানিতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা খরচ পড়বে। তাতে বাজারে এই আদা কোনোভাবেই এখনকার মতো চড়া দামে বিক্রি হবে না।

বাজারে এখন মূলত মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার আদা বেচাকেনা হচ্ছে। সংকটের অজুহাতে দাম বাড়লেও ঈদুল আজহা উপলক্ষে আদার নতুন চালান আমদানির পথে রয়েছে। সরবরাহ বাড়লে দামও স্থিতিশীল হবে।
মোহাম্মদ ইদ্রিস, খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেটের ব্যবসায়ী

অন্য দেশ থেকে আসছে কম

মিয়ানমার ছাড়া এখন ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে কিছু পরিমাণে আদা আমদানি হচ্ছে। এই তিন দেশ থেকে মোট আমদানির ২০ শতাংশ আদা আসছে। চলতি মে মাসে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি হওয়া আদার গড় আমদানি মূল্য ৯৩ সেন্ট বা ৯৯ টাকা। শুল্ক–করসহ খরচ পড়ছে ১০৯ টাকা। একই সময়ে ভিয়েতনামের আদার আমদানি মূল্য ৮৩ সেন্ট বা ৮৯ টাকা। শুল্ক–করসহ দাম পড়ছে ৯৯ টাকা। এই দুই দেশের আদা পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। আর খুচরায় ৩০০ টাকা।

ভারত থেকে আদা আসছে প্রতি কেজি ৪৪ সেন্ট বা ৪৭ টাকায়। শুল্ক–কর দেওয়ার পর খরচ পড়ছে ৫৭ টাকা। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভারতীয় আদার সরবরাহ নেই। ফলে দামও জানা যায়নি। খুচরা দোকানেও ভারতীয় আদা পাওয়া যাচ্ছে না।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এখন মূলত মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার আদা বেচাকেনা হচ্ছে। সংকটের অজুহাতে দাম বাড়লেও ঈদুল আজহা উপলক্ষে আদার নতুন চালান আমদানির পথে রয়েছে। সরবরাহ বাড়লে দামও স্থিতিশীল হবে।

চীন থেকে আদা আমদানি বন্ধ

বাংলাদেশে আদা আমদানির বড় উৎস ছিল চীন। করোনার সময় চীন থেকে আদা আমদানিতে যে ভাটা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত আছে এখনো। ২০১৯ সালে আদা আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার টন। এর মধ্যে চীন থেকে আমদানি হয়েছিল ৪৫ শতাংশ। ২০২০ সালে থেকে চীন থেকে আমদানি কমতে থাকে। এরপর দুই বছর ২০২০ ও ২০২১ সালে আদা আমদানিতে শীর্ষে ওঠে আসে ভারত।

গত বছর বাংলাদেশে আদা রপ্তানিতে শীর্ষে চলে আসে মিয়ানমার। গত বছর ১ লাখ ৬৫ হাজার টন আদা আমদানি হয়, যার ৪০ শতাংশই এসেছে মিয়ানমার থেকে।

চীন থেকে আমদানি বন্ধ কেন, জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, চীনে এবার ফলন ভালো হয়নি। নিজেদের দেশের চাহিদা মেটাতে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম থেকে আদা আমদানি করছে দেশটি। ফলে এবার তারা রপ্তানির জন্যও কোনো বিক্রয়াদেশ দিচ্ছে না।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চীন থেকে সর্বশেষ আদা আমদানি হয় গত ১৭ এপ্রিল। ওই দিন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দুই কনটেইনারের দুটি চালানে ৫৪ টন আদা আমদানি হয়। প্রতি কেজি আদার আমদানি মূল্য পড়ে ১৭৮ টাকা। শুল্কসহ আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ১৮৭ টাকা। এরপর গত এক মাসের বেশি সময় ধরে চীন থেকে একটি চালানও আমদানি হয়নি।

বাজারে এখন চীনের যে আদা প্রতি কেজি ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, তা মূলত ১৮৭ টাকায় আমদানি করা। তার মানে, আমদানি মূল্যের আড়াই গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চীনের আদাও।