পোশাকের মতো অন্যান্য খাতও পাবে বন্ড–সুবিধা 

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বাংলাদেশ রপ্তানি খাত নিয়ে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, সেগুলো মোকাবিলায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বর্তমানে পোশাকশিল্পে যে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স–সুবিধা রয়েছে, তা রপ্তানিযোগ্য অন্য সব পণ্যের ক্ষেত্রেও দেওয়া হবে। ফলে দেশ থেকে যেসব পণ্য রপ্তানি হবে, সেগুলো উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে উদ্যোক্তাদের কোনো শুল্ক পরিশোধ করতে হবে না। এই সুবিধার সঙ্গে শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্যের ক্ষেত্রে ডিউটি ড্র ব্যাক সুবিধাও থাকবে।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর রপ্তানি খাত নিয়ে সম্ভাব্য যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশ, তা মোকাবিলা করতে প্রাথমিকভাবে এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে সরকার। ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠেয় রপ্তানিসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় এসব নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে।

এলডিসি তালিকা থেকে বের হলে বাংলাদেশকে কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, তা নিয়ে করণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি করে ২০২২ সালের এপ্রিলে ‘রপ্তানিসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’ গঠন করা হয়। কমিটিতে ১১ জন মন্ত্রী, ১১ জন সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এফবিসিসিআই সভাপতিসহ বিভিন্ন চেম্বার ও সমিতির সভাপতি মিলিয়ে ৪৪ সদস্য রয়েছেন। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গণভবনের বৈঠকে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।

বৈঠকে পোশাক খাতের পাশাপাশি আরও কিছু খাতকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক সমিতি ও চেম্বারের নেতারাও বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। আশা করছি, বৈঠক থেকে ভালো কিছু সিদ্ধান্ত উঠে আসবে
তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব

এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের কিছু বাণিজ্যসুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। তখন বেশি সমস্যায় পড়তে হবে রপ্তানি খাতকে। কারণ, এলডিসি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা পায় বাংলাদেশ, তা আর পাওয়া যাবে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে পাওয়া শুল্কসুবিধাও বন্ধ হয়ে যাবে এলডিসি থেকে উত্তরণের তিন বছর পর। এ ছাড়া ওষুধশিল্পের ওপর মেধাস্বত্বের বিধিবিধান কঠোর হবে। এলডিসি হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোকে আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানের মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দিতে হয় না। মেধাস্বত্বের (পেটেন্ট) ওপর অর্থ দিতে হলে ওষুধের দাম বেড়ে যাবে।

ডব্লিউটিওর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে পণ্য রপ্তানিতে নিয়মিত যে হারে শুল্ক বসবে, তাতে বাংলাদেশকে বছরে ৫৩৭ কোটি মার্কিন ডলার বা ৫৮ হাজার কোটি টাকা বাড়তি শুল্ক গুনতে হবে।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন কমে যাচ্ছে, তখন রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকশিল্পের বাইরের খাতগুলোকে সুবিধা দিতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, আমি তাকে ইতিবাচকভাবে দেখছি।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ মার্চের বৈঠকে মোটাদাগে পাঁচটি বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বিষয়গুলোর আওতায় থাকবে ৩০টি বিষয়। বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর সামনে দেশের ১০ বছরের রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধি এবং পণ্য ও দেশভিত্তিক রপ্তানি আয়ের চিত্র তুলে ধরা হবে। অন্তত আটটি দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বা অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ), তিনটি দেশ ও একটি অঞ্চলে বাণিজ্য মিশন স্থাপন এবং সব বন্দরের কাছাকাছি শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস ও হিমায়িত খাদ্য সংরক্ষণের সুবিধার্থে হিমাগার নির্মাণের ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হবে।

জানা গেছে, শ্রম অধিকার ও কারখানার নিরাপদ পরিবেশ এবং পরিবেশবিষয়ক আলোচনা হবে বৈঠকের একটা অংশজুড়ে। এতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানের সঙ্গে মিলিয়ে দেশের শ্রম আইন (২০০৬) সংশোধন এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম দূর করা নিয়ে আলোচনা হবে।

বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ আইন ও বিধিমালা চিহ্নিত করার পাশাপাশি ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়ন ও শুল্ক আইন প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈঠকে পোশাক খাতের পাশাপাশি আরও কিছু খাতকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক সমিতি ও চেম্বারের নেতারাও বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। আশা করছি, বৈঠক থেকে ভালো কিছু সিদ্ধান্ত উঠে আসবে।’