আমদানি শুরুর পর দ্রুত কমছে ডিমের দাম

ডিম
ফাইল ছবি

ভারতীয় ডিমের মাত্র একটি চালান দেশে এসেছে। এখন পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৬২ হাজার ডিম। এর পর থেকেই ঢাকার বাজারে দ্রুত কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম। ভারতীয় ডিম দেশে আসার পর তিন দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ১৫-২৫ টাকা কমেছে। কোনো কোনো বাজারে এর চেয়েও বেশি কমেছে। ফলে প্রতি ডজন ডিমের দাম সরকার নির্ধারিত ১৪৪ টাকার নিচে নেমে এসেছে।

রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও ডিমের বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৩৫-১৪০ টাকায়। অথচ গত রোববারেও ঢাকায় প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দাম আরও কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের কথাকেই সমর্থন করছে। মুরগির সাদা রঙের ডিমের ডজন ইতিমধ্যে কমবেশি ১৩০ টাকায় নেমে এসেছে। তেজগাঁও ডিমের আড়তের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত রাতে তাঁরা প্রতি ১০০টি সাদা ডিম ৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। পাইকারিতে এই দামে সাদা ডিম বিক্রি হলে ডজনপ্রতি দাম দাঁড়ায় ১০৮ টাকা। খুচরা বাজারে আরেকটু বেশিতে বিক্রি হলেও এখনকার তুলনায় ডিমের দাম আরও কমার কথা।

মালিবাগের ডিম বিক্রেতা তানভীর হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারিতে ১০০টি বাদামি ডিম কিনতে হাজার টাকার মতো লাগছে। তাতে খুচরা বাজারেও ডিমের দাম বেশ কমে এসেছে। আর দাম কমার কারণে বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সরকার প্রতিটি ডিমের খুচরা মূল্য ১২ টাকায় বেঁধে দেওয়ার পরও দাম কখনোই এতটা কমেনি। বাজারে ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দাম কমেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। বেশ দ্রুত গতিতে ডিমের দাম কমছে বলে জানান তাঁরা।

ভারতীয় ডিমের প্রথম চালান দেশের বাজারে ঢুকেছে গত রোববার রাতে। তবে যে ৬২ হাজারের মতো ডিম দেশে এসেছে, সাধারণভাবে তার ফলে বাজারে বড় কোনো প্রভাব পড়ার কথা না। কারণ, বাংলাদেশে প্রতিদিন কমবেশি চার কোটি ডিম বিক্রির জন্য বাজারে যায়। তবে আমদানি করা ডিম দেশে আসার খবর জানার পরই বাজারে ডিমের দাম দ্রুত কমতে শুরু করে। এর আগে ডিমের দাম সামান্য ওঠানামার মধ্যে ছিল।

বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমে এসেছে উল্লেখ করে তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানির যে ডিম এসেছে, তা সমুদ্রের মধ্যে এক ফোঁটা পানি। এতে বাজারে প্রভাব পড়ার কথা না। এখন খামার থেকে ডিম আসছে কম দামে। তাতেই দাম নেমে এসেছে।’

পাইকারি ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দাম দ্রুত কমে আসার পেছনে ডিম আমদানির ভূমিকা রয়েছে। ডিমের আমদানি মূল্য পড়েছে ৫ টাকা ৪৩ পয়সা। শুল্ক ১ টাকা ৮০ পয়সা যোগ হয়ে প্রতিটি ডিম বাংলাদেশে ঢুকেছে ৭ টাকা ২৩ পয়সায়। এরপর স্থানীয় পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ যোগ হচ্ছে। তারপরও দেশের ডিমের তুলনায় আমদানি করা ডিমের দাম কিছুটা কম পড়ছে।

এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানিকারকেরা ডিম দেশে নিয়ে আসতে শুরু করায় ডিমের স্থানীয় অনেক উৎপাদক দাম দ্রুত কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে ডিমের দাম কমতে থাকলে আমদানিকারকেরা লোকসানের ভয়ে ডিম নিয়ে আসতে চাইবেন না। আমদানির ডিম যাতে না আসে, সেই বার্তাই দিতে চাইছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, চাইলেই হুট করে ডিমের সরবরাহ বাড়ানো যায় না। শীতে আসলে বরং মুরগির নানা রোগবালাই হয়। তাতে মুরগির ডিম পাড়া ব্যাহত হয়। তবে দাম হুট করে নেমে আসায় এটা মানতে হবে যে আমদানির খবরে ডিমের দামে প্রভাব পড়েছে। বাজারে এমন প্রতিযোগিতা থাকলে তাতে ভোক্তারা স্বস্তি পাবেন।  

মাস দুয়েক আগে বাজারে ডিমের দাম প্রতি ডজনে ১৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার প্রতিটি ডিমের খুচরা দাম ১২ টাকায় বেঁধে দেয়। কিন্তু তাতেও ডিমের দাম না কমায় ১৮ সেপ্টেম্বর সরকার প্রথম ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। পরে পর্যায়ক্রমে ১৫টি কোম্পানিকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ।