বাজেটে শুল্কছাড়, কিছু ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের দাম কমবে

মোটরসাইকেলপ্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে এখন মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনও সংযোজিত হচ্ছে। এবারের বাজেটে সরকার ইঞ্জিন সংযোজনে যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কছাড়ও দিয়েছে। ফলে দাম কমবে কিছু ব্র্যান্ডের কিছু মডেলের মোটরসাইকেলের।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব দিয়েছেন, ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ৩ শতাংশের অতিরিক্ত সব আমদানি, নিয়ন্ত্রণমূলক ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়।

মোটরসাইকেল খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাজেটের প্রস্তাবের ফলে ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমে ৩ শতাংশে নেমেছে। উল্লেখ্য, বাজেটের শুল্ক প্রস্তাব ঘোষণার পরই কার্যকর হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেডের (বিএইচএল) প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাজেটে ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ শুল্ক–কর কমানোর সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। এটা দেশে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন সংযোজনে উৎসাহ দেবে। পাশাপাশি যেসব মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন সংযোজন দেশে হবে, সেগুলোর উৎপাদন খরচে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

২০১৮ সালের পর দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে ১০টির বেশি কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের হোন্ডা, ইয়ামাহা ও সুজুকি এবং ভারতের উত্তরা মোটরস, টিভিএস অটো ও হিরোর মতো প্রতিষ্ঠান। দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে রয়েছে রানার অটোমোবাইলস। এসব প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেলের অনেক যন্ত্রাংশ আমদানি করে। কিছু দেশে তৈরি করে।

কারিগরি দিক দিয়ে সবচেয়ে জটিল হলো ইঞ্জিন তৈরি। এ ক্ষেত্রে জাপানিরা সিদ্ধহস্ত। ভারত ও চীনেও ইঞ্জিন তৈরি হয়। বাংলাদেশে কিছু মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন সংযোজন শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশে হোন্ডার কারখানায় মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন সংযোজনের কাজ উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। এখন তারা চারটি মডেলের ইঞ্জিন সংযোজন করছে।

ইঞ্জিন সংযোজন করে নিটল-নিলয় গ্রুপও, যাঁরা ভারতের হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনে হিরো মোটোকর্পের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কারখানা করেছে। এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেডের কোম্পানি সচিব ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) বিজয় কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশে শুল্ক কমানো এনবিআরের একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। এটা ইঞ্জিন সংযোজনকে উৎসাহ দেবে। সংযোজন করতে করতে একসময় বাংলাদেশে ইঞ্জিন তৈরিও হতে পারে।

জাপানি ব্যান্ড সুজুকির কিছু কিছু মডেল এবং দেশীয় ব্র্যান্ড রানারের মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন দেশে সংযোজিত হয়।

দেশে মোটরসাইকেলের কারখানাগুলোর বেশির ভাগ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী উৎপাদনকারী, তথা অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার (ওইএম) হিসেবে স্বীকৃত। দেশে সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় (সিবিইউ) মোটরসাইকেল আমদানি করলে মোট শুল্ক–কর দাঁড়ায় ১৫৩ শতাংশের মতো। আর সম্পূর্ণ বিযুক্ত (সিকেডি) অবস্থায় আমদানি করলে করভার ৮৯ শতাংশ।

উৎপাদনকারীর দুটি শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। প্রথম শ্রেণিতে থাকা কারখানাকে মোটরসাইকেলের চেসিস (কাঠামো) ও কাঁচামাল থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হয়। তাদের ক্ষেত্রে আমদানিতে মোট করভার ৩০ শতাংশের মতো। দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকা কারখানাকে চেসিস ও একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে করভার ৪২ শতাংশের মতো।

ইঞ্জিনও সিবিইউ অবস্থায় আমদানি করা হয়। কেউ কেউ আবার যন্ত্রাংশ এনে দেশে সংযোজন করে। তবে ২০২৩ সালের ২১ মে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ইঞ্জিন সংযোজনে কর ছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে ইঞ্জিন সংযোজনকারীদের আপত্তি ছিল। এবারের বাজেটে আবার সংযোজনে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

যারা ইঞ্জিন সংযোজন করে, তারা বাজেটে ছাড় পেলেও অন্যরা বিপাকে রয়েছে। মার্কিন ডলারের দাম বাড়ছে। কাস্টমসে শুল্ক–কর আরোপের ক্ষেত্রে ডলারের বাড়তি দাম ধরা হচ্ছে। গত মাসের শুরুতে কাস্টমসে ডলারের দাম ধরা হতো ১১০ টাকা। চলতি জুন মাসে তা ধরা হচ্ছে ১১৩ টাকা ৮০ পয়সা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী মাসে ডলারের দাম আরও বাড়িয়ে ধরতে পারে কাস্টমস। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি অনুযায়ী ডলারের দর এখন ১১৭ টাকা ছাড়িয়েছে।

ডলারের দাম বাড়লে মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিকারকেরা দুইভাবে বিপাকে পড়েন। প্রথমত, সরাসরি আমদানি খরচ বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, আমদানিতে শুল্ক–করও বেশি পড়ে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মোটরসাইকেল বিপণনকারী কোম্পানির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মোটরসাইকেলের দাম বেড়েছে। এটা এখানেই থেমে থাকবে, তা নয়। আরও বাড়বে। কারণ, ডলারের দামসহ সব ক্ষেত্রেই খরচ বাড়ছে। তিনি বলেন, দাম বাড়ার কারণে মোটরসাইকেল বিক্রি কমে গেছে।