গভীর সাগরে ভাসছে পণ্যবাহী ৬২ জাহাজ

সাগরে পাঠানো জাহাজগুলো যেন সার্বক্ষণিক ইঞ্জিন চালু রাখে, সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আবার এক জাহাজ থেকে আরেক জাহাজ নির্ধারিত দূরত্বে নোঙর করে রাখতে বলা হয়েছে।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে বাঁচাতে সাগরের ট্রলারগুলোকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার চেষ্টা চলছে এখন। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের আগেও
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব থেকে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বন্দর জেটি থেকে সব জাহাজ গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে থেকেই বহির্নোঙরে ছিল পণ্যবাহী ৪২টি জাহাজ। সব মিলিয়ে নিত্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে এখন গভীর সাগরে ভাসছে ৬২টি জাহাজ।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাগর উত্তাল হলেও এসব জাহাজ ঢেউয়ের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে টিকতে পারে। কিন্তু জেটিতে থাকলে ঢেউয়ের ধাক্কায় জেটিতে আঘাত লেগে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তাই জেটি থেকে সব জাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চ্যানেলে ডুবে নৌপথ বন্ধ করে দেওয়ার শঙ্কা থাকে। সে জন্য ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এই নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বন্দর।

জানতে চাইলে বন্দরসচিব মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে বন্দর জেটি, জাহাজ ও স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর দুর্ঘটনা এড়াতে বড় জাহাজগুলো সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সাগরে পাঠানো জাহাজগুলো যাতে সার্বক্ষণিক ইঞ্জিন চালু রাখে, সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। আবার এক জাহাজ থেকে আরেক জাহাজ নির্ধারিত দূরত্বে নোঙর করে রাখতে বলা হয়েছে।

গতকাল শনিবার সকালে হালনাগাদ করা বন্দরের তালিকা অনুযায়ী, সাগরে থাকা বড় জাহাজগুলোর মধ্যে ১১টি কনটেইনার জাহাজ। কনটেইনারবিহীন জাহাজে চিনি, খাদ্যশস্য, লবণ, সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, পাথর ও সাধারণ পণ্য রয়েছে। কনটেইনার জাহাজগুলো ছোট আকারের হলেও ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের জাহাজগুলো বড় আকারের। একেকটিতে ৫০ থেকে ৬৫ হাজার টন পণ্যবাহী; অর্থাৎ সুপরাম্যাক্স ও আলট্রাম্যাক্স ধরনের জাহাজ রয়েছে সেখানে।  

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলায় উপকূলের কাছে থাকা বন্দরগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৯৯১ সালে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার এক বছর পর বন্দর একটি নীতিমালা তৈরি করে। এখন সেই নীতিমালার আলোকে পদক্ষেপ নিয়ে আসছে বন্দর। তাতে ক্ষয়ক্ষতিও তুলনামূলক কম হয়েছে।  

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, মূলত দুর্যোগ মোকাবিলায় কখন কী করতে হবে, তা ঠিক করতে বন্দরের নিজস্ব প্রস্তুতির জন্য এই সতর্কতা জারি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৯৯২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রণীত ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত অনুযায়ী চার ধরনের সতর্কতা জারি করে বন্দর।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-১’ জারি করে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৪ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি করে। বিপৎসংকেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য বন্দরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়। মহাবিপৎসংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়। সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি হলে বন্দর জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর গত শুক্রবার রাতে মহাবিপৎসংকেত জারির পরই পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জাহাজ, যন্ত্রপাতি ও কনটেইনার সুরক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হতে থাকে শুক্রবার রাত থেকে। বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন থেকে।

জাহাজ ছাড়াও বন্দরের যন্ত্রপাতি সুরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। আবার বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার একক কনটেইনার। এসব কনটেইনার যথাসম্ভব সুরক্ষিত করে রাখা হয়েছে বলে বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতেও ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে ডিপো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি পণ্য আনা-নেওয়া হয়। রপ্তানি পণ্যের প্রায় পুরোটাই এই বন্দর দিয়ে নেওয়া হয়। এ জন্য বন্দর ঘিরে জানমাল ও পণ্যের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা ইতিবাচক।

মাহবুবুল আলম বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আবার সে সময় সরাসরি এই অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড়। তাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।