নির্ধারিত মূল্যের দোকান থেকে পণ্য কেনার পরামর্শ দিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামছবি: সংগৃহীত

ভোক্তাদের নির্ধারিত মূল্যের দোকান থেকে পণ্য কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বাজারদরের সংবাদে যেন কেবল মানুষের মুখের কথা প্রচার করা না হয়, সে বিষয়েও সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছেন তিনি।

আজ সচিবালয়ে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোজার পণ্য সুপারশপগুলোতে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হয়, নির্ধারিত মূল্যের দোকানগুলোতে তুলনামূলকভাবে কাঁচাবাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, ‘আমার নিজের কাছেও অবাক লাগে, যারা মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত, তাদের জন্য সুপারমার্কেট, কিন্তু মানুষ সেখানে যেতে চায় না। সুপারমার্কেট অ্যাসোসিয়েশন আমাকে একটি চিঠি দিয়েছে, রোজার মধ্যে তারা কোন প্রয়োজনীয় পণ্য কত কমে বিক্রি করবে, এটা উদাহরণ হতে পারে।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যের দাম হাইলাইট করতে যেখানে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া আছে, সেখানকার দাম হাইলাইট করা দরকার। মানুষ জানবে সুপারমার্কেটে এই দাম, তাহলে কাঁচাবাজারে গিয়ে মানুষ কেন তা কিনবে? সুপারমার্কেটে যদি ২৯ টাকায় আলু পাওয়া যায়, তাহলে ৩৫ টাকার আলু কিনতে দামাদামি করা কেন। অনেকে মনে করেন, দামাদামি করলে হয়তো দুই টাকা সাশ্রয় হবে, সে জন্যই মানুষ কাঁচাবাজারে যায়।

ঢাকার প্রতিটি পাইকারি বাজার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারিতে আছে বলে উল্লেখ করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। বলেন, সরবরাহব্যবস্থা নজরদারিতে সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে, এটা আগামীকাল উদ্বোধন করা হবে। এতে দেখা যাবে, কোথা থেকে কীভাবে পণ্য যাচ্ছে, কৃষক বেগুনের দাম পাচ্ছেন ১০ টাকা, সেটি ঢাকায় এসে কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা জানা যাবে। এ সবকিছু বিপণন আইনের আওতায় আছে কি না, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে তা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।

এ সময় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, চালের বাজারে অস্থিরতা নেই, যেহেতু কোনো নিউজ নেই, সেহেতু চালের বাজারে অস্থিরতা নেই।

অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে সাংবাদিকেরা বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, সুপারশপ থেকে মানুষকে পণ্য কেনার উৎসাহ দিচ্ছেন কি না। জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেখানে নির্ধারিত দামে পণ্য কেনা যায়, সেখান থেকে পণ্য কিনতে বলেছি, একই সঙ্গে বলেছি, কোনো একজন ব্যক্তির মুখের কথা যেন প্রচার করা না হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমি কাউকে “প্রোমোট” করছি না, বরং ভোক্তাদের সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলছি, কোথায় কম দামে জিনিস পাওয়া যায়, সেটাই রেফার করার চেষ্টা করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আহসানুল ইসলাম বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজ উপজেলা পর্যায়ে চলে গেছে বলে উল্লেখ করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে যে উদ্যোগগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর কাজ করছে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ  

এদিকে খেজুরের দাম নির্ধারণ-সংক্রান্ত চিঠিতে শব্দের ব্যবহার নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। ১১ মার্চ দুই ধরনের খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ-বিষয়ক চিঠিতে একধরনের খেজুরকে ‘নিম্নমানের খেজুর’ এবং আরেক ধরনের খেজুরকে ‘জাইদি খেজুর’ উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার পর ‘নিম্নমানের খেজুর’ সংশোধন করে ‘সাধারণ মানের খেজুর’ লিখে নতুন করে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই ভুলের কারণে দুঃখ প্রকাশ করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ১৫ মার্চ, অর্থাৎ আগামীকাল শুক্রবার। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে এ রকম: ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি, ভোক্তার স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করি’।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১১ মার্চ খেজুরের দাম বেঁধে দিয়ে এফবিসিসিআইকে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বলা হয়, প্রতি কেজি ‘অতি সাধারণ/নিম্নমানের খেজুর’-এর দাম ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং ‘বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুর’-এর দাম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা হবে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছোটখাটো ভুল হয়, সেটাকে হাইলাইট না করে আমি সব সময় বলি, প্রচেষ্টাগুলোও একটু হাইলাইট করা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব ট্রল হচ্ছে, আমাদের ছোট একটা, ছোট না, আমি বলব যে বড় ভুল, আমাদের ভাষা ঠিক হওয়া দরকার ছিল। পরবর্তী সময়ে সেটা সংশোধন করে দিয়েছি, কিন্তু সেটা হাইলাইটেড হয়নি।’
আহসানুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের যখন ভুলত্রুটি হয়, তখন আমরা দ্রুত কাজ করতে যাই।

চেয়েছিলাম প্রথম রমজানেই নোটিশটি দিয়ে দিতে। এক সপ্তাহ আগে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছিলাম, তারা নিজেরাই যেন দাম নির্ধারণ করে দেয়। যেহেতু তারা গড়িমসি করছিল, সেহেতু আমরা চাইছিলাম, প্রথম রমজান থেকেই এটা নির্ধারণ করে দিই। তাড়াহুড়ার কারণে আমাদের ভুল হয়ে গেছে; সে জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০০৯-১০ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অধিদপ্তর ৭২ হাজার ৯৩৭টি বাজার তদারক করেছে। এ সময়ে মোট ১২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে এ অধিদপ্তর।