৫৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেল বাংলাদেশি উদ্যোক্তার এফাইন

তারিক আদনান মুন

ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্স স্টার্টআপ এফাইন প্রোটোকল ৫১ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকার সমান। বাংলাদেশি তারিক আদনান মুন এই স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা।

তারিক আদনান মুন প্রথম আলোকে জানান, এই সিড রাউন্ডে তাঁদের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী আমেরিকার দুটি নামী ভেঞ্চার বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হ্যাক ভিসি ও জাম্প। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও রয়েছে সার্কেল ভেঞ্চার, কয়েনবেস ভেঞ্চার, প্রোপেল ভিসিসহ অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

এফাইনের মূল লক্ষ্য হলো ব্লক চেইনভিত্তিক সম্পদ থেকে মুনাফা লাভ করার পদ্ধতি সহজ করা। তারিক আদনান জানান, ১০ কোটি ব্লক চেইন ব্যবহারকারীদের কাছে ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্স সহজলভ্য করার জন্য তাঁরা কাজ করছেন। ৫১ লাখ ডলারের বিনিয়োগ ব্যবহার করে তাঁরা এই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চান। জনপ্রিয় ইথেরিয়াম ও পলিগন ব্লক চেইন ব্যবহার করে এফাইন অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহারকারীরা সহজেই তাঁদের ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য ব্লক চেইনভিত্তিক সম্পদকে অ্যাপটির মাধ্যমে সঞ্চয় করতে পারেন। অ্যাপটি সঞ্চয়প্রক্রিয়াকে সহজ ও স্বচ্ছ করে।

ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্সে গত তিন বছরে অনেক নতুন প্রোটোকল ও অ্যাপ যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবহারিক জটিলতা বেড়েছে। ফলে ব্যবহারকারীরা অনেক ঝুঁকি ও বিভ্রান্তির মুখোমুখি হন। তারিক আদনান জানান, এসব জটিলতা দূর করতে এফাইন কাজ করে যাচ্ছে।

জনপ্রিয় লেয়ার টু ব্লক চেইন পলিগনের প্রতিষ্ঠাতা ও এফাইনের অন্যতম বিনিয়োগকারী জয়ন্তী কানানি বলেন, ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্সে প্রতিদিন নতুন নতুন চেইন যুক্ত হচ্ছে, যা কিনা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য ব্যবহার করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে এফাইন একটি সুন্দর সমাধান।

স্বচ্ছতার অভাব ও জালিয়াতির কারণে ব্লক চেইনশিল্পে এখন অনেক চ্যালেঞ্জিং। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা। তারিক আদনান বলেন, বাজারের নিম্নগতি আর জালিয়াতি ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্সে মুনাফা লাভের প্রক্রিয়াকে অস্বচ্ছ আর দুর্লভ করেছে। এই সমস্যার সমাধান করে ব্যবহারকারীদের ভালো মুনাফা প্রদান করাটা খুবই কঠিন। তিনি জানান, ঝুঁকি বেশি থাকাতে বিশ্বের অন্যতম বড় ডিসেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জ ইউনিসোয়াপ প্রতিদিন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ১৫ লাখ ডলারের বেশি ফি নিয়ে থাকে। অথচ তাঁরা গত এক বছরে ১০ কোটি ডলারের বেশি লোকসান দিয়েছেন।

এফাইন এই ব্লক চেইনভিত্তিক সম্পদ থেকে মুনাফা লাভের প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করেছে এআই ও বট ব্যবহারের মাধ্যমে। এই ব্যবস্থা ব্যবহারকারীর সম্পদের মূল্য কমে গিয়ে লোকসান হওয়া থেকে বাঁচায়। এ ধরনের ব্যবস্থা এত দিন কেবল হেজ ফান্ডস এবং বড় ব্যাংক বা ইনস্টিটিউশনের কাছে কুক্ষিগত ছিল। ফলে তারাই কেবল এ ধরনের ব্যবস্থায় লাভবান হতে পারত। এফাইন এই প্রক্রিয়াকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে সবার জন্য সমান অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির জন্য কাজ করছে।

এফাইন গত বছর ১৮ লাখ ডলারের প্রি-সিড ফান্ড বা বিনিয়োগ পায়। ২০২০ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিস্কোতে এফাইন যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে তাদের প্রধান কার্যালয় নিউইয়র্কে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি ও মার্কিন মেধাবীদের নিয়ে এফাইন দলটি কাজ করে। এফাইনের পণ্য পুরোপুরি উন্মুক্ত। বর্তমানে ব্যবহারকারীরা ২০ লাখ ডলার অ্যাপটির মাধ্যমে বিনিয়োগ করছেন।