আবারও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা
বড়দিন ও নতুন বছরের ব্যবসায়িক চাপ শেষ হয়েছে। ফলে সারা বিশ্বের খুচরা বিক্রেতারা এবার কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন। জাহাজ পরিবহনের চাপও কিছুটা কমেছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রণের বাড়বাড়ন্তের কারণে ইউরোপ-আমেরিকা ও ভারতে আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এতে নতুন করে পরিবহনসংকটের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নিউইয়র্ক শাখা বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার চাপ নিরূপণে নতুন এক সূচক প্রণয়ন করেছে। তাতে দেখা গেছে, গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাস থেকে সরবরাহব্যবস্থার চাপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে সরবরাহব্যবস্থার ওপর যে চাপ আছে, তা এখনো ঐতিহাসিকভাবে অনেক বেশি। তবে সূচকের ভবিষ্যদ্বাণী, আগামী দিনে চাপ কিছুটা কমবে।
কিন্তু অমিক্রণের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। সিএনএনের সংবাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ড্রিউরির গবেষণা বিভাগের পরিচালক মার্টিন ডিক্সন সিএনএনকে বলেন, রেকর্ডসংখ্যক সংক্রমণের কারণে ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে কর্মীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দেশ এখনো শূন্য কোভিড নীতি অনুসরণ করছে। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় চীন অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু দেশটির বিভিন্ন শহরে কোভিড সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যেমন জিয়ান শহরে গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে বিধিনিষেধ চলছে। এই শহরে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। বিধিনিষেধের কারণে ইতিমধ্যে স্যামসাং ও মাইক্রনের মতো কোম্পানি উৎপাদনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে।
বাস্তবতা হলো, নভেম্বর মাসে সরবরাহব্যবস্থায় চাপ কমতে শুরু করলে এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে ৪০ ফুট আকৃতির কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু চীনে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে চান্দ্র নববর্ষ উদ্যাপিত হবে। এতে চাপ বেড়ে যাওয়ায় চীনের সাংহাই বন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে।
তবে জাহাজের ভাড়া আবারও মৌসুমের সর্বোচ্চ ভাড়ার সমান হবে না বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। কিন্তু চাহিদা বাড়তি থাকলে বা বন্দরে জট থাকলে জাহাজ পরিবহনের ভাড়া বাড়তি থাকবে। চাহিদা কমলেই কেবল জাহাজ ভাড়া কমতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের ধনী দেশের মানুষেরা কোভিডজনিত বিধিনিষেধ আর মানতে চান না। গত দুই বছর কয়েক দফা প্রণোদনার কারণে তাঁদের হাতে টাকাও আছে অনেক। ফলে তাঁরা ব্যয় করতে চান। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড সংক্রমণ দিনে ১০ লাখ পর্যন্ত উঠলেও সর্বাত্মক বিধিনিষেধে তারা আর যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চাহিদা হ্রাসের সম্ভাবনা তাই খুবই কম।
এই সরবরাহ সংকটের জন্য সারা পৃথিবীতেই মূল্যস্ফীতি বাড়তি। বাড়তি পরিবহন ভাড়ার চাপ কমাতে আসবাব কোম্পানি আইকিয়া ২০২২ সালে ৯ শতাংশ দাম বাড়াবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। আবার চিপ সংকেটর কারণে গাড়ি ও ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন চাপের মুখে পড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি আরও কিছুদিন বাড়তি থাকবে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।