কফির বাজারে একক আধিপত্য ব্রাজিলের

কফি যেন নগর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীর এমন কোনো শহর নেই যেখানে কফির দোকান মিলবে না। তথ্যানুসারে, পানি ও চায়ের পর পৃথিবীর তৃতীয় সর্বাধিক বিক্রীত বেভারেজ হচ্ছে কফি। সে কারণেই বিশ্বজুড়ে কফি বীজের চাহিদা। ব্যবসাও রমরমা। কফির পরিমাপ আবার কিছুটা ভিন্ন উপায়ে করা হয়, ৬০ কেজির বস্তা হিসাবে। ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশনের তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে বিশ্বে ৬০ কেজি ওজনের প্রায় ১৭ কোটি বস্তা সমপরিমাণ কফি উৎপাদিত হয়েছে।

কথা হচ্ছে, কফি এত জনপ্রিয় কেন। কফি পান করে মানুষ একধরনের মিশ্র অনুভূতি পায়। সুগন্ধি তবে একটু কড়া ও গা গরম করা, সেই গরমের অনুভূতি আবার ঠিক অস্বস্তিকর নয়। কফির বিশেষ দিক হলো, এটি নানা উপায়ে পরিবেশন করা যায়—ছোট কাপে বা বড় মগে। সঙ্গে আবার নানা সুগন্ধ ও স্বাদও যোগ করা যায়।

যা হোক, এবার কফির বাণিজ্যে আসা যাক। বিশ্বের ১০টি শীর্ষ কফি উৎপাদনকারী দেশের হাতেই বৈশ্বিক কফির বাজারের ৮৭ শতাংশ। বিশ্বের শীর্ষ কফি উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটি দেশ পরিচিত হলেও অন্য নামগুলো বিস্ময় জাগাতে পারে। বিশ্বের ৭০টি দেশে কফি উৎপাদিত হয়, যদিও সিংহভাগ কফি আসে মাত্র পাঁচটি দেশ থেকে। সেগুলো হলো ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, কলাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ইথিওপিয়া।

শীর্ষ কফি উৎপাদক দেশ হচ্ছে ব্রাজিল। বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ কফি দেশটি জোগান দেয়। ব্রাজিলের ভূমি ও জলবায়ু কফি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। দেশটির ২৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কফির চাষ হয়। ব্রাজিলের কফির বিশেষত্ব হলো, এই কফি ধোয়া ছাড়াই শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। কফির জগতে ব্রাজিলের আধিপত্য এত বেশি যে তাদের ব্যবহৃত ৬০ কেজির বস্তা বিশ্বজুড়ে কফি আমদানি-রপ্তানির একক হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

কফির বাজারে জায়গা করে নিতে ভিয়েতনাম কিছুটা ভিন্ন পথে হেঁটেছে। তারা মূলত কম দামি রোবাস্তা জাতের কফির বীজ উৎপাদন করে থাকে। এতে ক্যাফেইনের পরিমাণ অ্যারাবিকার দ্বিগুণ। এই কফির স্বাদ তেতো।

অবশ্য বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তাতে ভালো বা মানসম্মত কফি উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ভবিষ্যতে কফির উৎপাদন ঠিক রাখতে নতুন জাতের কফি উৎপাদন জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, সিয়েরা লিয়নসহ আশপাশের অঞ্চলে কিছু বুনো জাতের কফি উৎপাদিত হচ্ছে। এই নতুন জাত ভবিষ্যতে কফির চাহিদা মেটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই কফির স্বাদ অ্যারাবিকা জাতের মতো।