চাপের মুখে মাথা নত করেননি কৌশিক বসু

কৌশিক বসু
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্বব্যাংকের ব্যবসার পরিবেশ সূচক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ হওয়ায় হতাশ অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। একসময় তিনি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ, ২০১২-১৬ সাল পর্যন্ত যাঁর কাঁধে ছিল ওই প্রতিবেদন তৈরির ভার।

কোন দেশে ব্যবসার পরিবেশ কত সহজ, বিনিয়োগকারীদের তা জানানোর জন্য এই প্রতিবেদন তৈরি করা হতো। কিন্তু তাতে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাই সেটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি হতাশা প্রকাশ করে কৌশিক বসু বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস র‍্যাঙ্কিংয়ে গাফিলতির খবরে (আমি) আহত। ২০১২-১৬ পর্যন্ত এই প্রতিবেদন ছিল আমার অধীনে। বিভিন্ন সরকারের পক্ষ থেকে চাপ আসত, কিন্তু আমরা কখনো তার সামনে মাথা নত করিনি। আমি দুঃখিত, সেই অবস্থা বদলে গেছে। তবে এর সঙ্গে আরেকটি কথা যোগ করতে চাই, এখনকার হোক বা আগের, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আমার ওপরে কখনো চাপ আসেনি।’

২০০২ সাল থেকে প্রতিবছর এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করত বিশ্বব্যাংক। অনিয়মের কথা প্রথম সামনে আসে তাদের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমারের কথায়। তথ্যের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, মূলত চিলির প্রেসিডেন্টকে বিড়ম্বনায় ফেলতে রাজনৈতিক কারসাজি করা হয়েছে সূচকে। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে ব্যাংকের শীর্ষ মহলের তিরস্কারের মুখে মন্তব্য প্রত্যাহার ও পদত্যাগ করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগ টানতে কোন দেশ (বিশেষত সম্ভাবনাময়) কতটা উৎসাহী ও সে জন্য কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে বিনিয়োগকারীদের বড় ভরসা ছিল বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদন। বিনিয়োগকারীরা মূলত এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতেন।

গত কয়েক বছরে কিছু দেশ তালিকায় এগোতে নানা ব্যবস্থা নিলেও একাংশ প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে, যাদের মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত হচ্ছে চীন। শেষে গত বছর র‍্যাঙ্কিং যাচাইয়ের তথ্যে অনিয়মের কথা জানিয়ে এর প্রকাশ স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে বিশ্বব্যাংক। বলেছিল, খতিয়ে দেখা হবে গত কয়েক বছরের প্রতিবেদন। পূর্ণাঙ্গ তদন্তে চীনের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে এবং এ জন্য আঙুল তোলা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বর্তমানে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার দিকে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে এই জালিয়াতির খবরে সারা পৃথিবীতেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, যারা এত দিন সারা পৃথিবীকে সুশাসনের জ্ঞান দিয়ে এসেছে, এবার তাদের মধ্যেই এত বড় জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় বিশ্বব্যাংকের নৈতিক অবস্থান ক্ষুণ্ন হবে। এই নৈতিক স্খলনের জন্য দোষীদের কী সাজা হয়, বিশ্ববাসী এখন তা-ই দেখার অপেক্ষায়।