দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসন কোম্পানি এভারগ্র্যান্ড

ছবি: রয়টার্স

দেউলিয়া হওয়ার পথে চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এভারগ্র্যান্ড। ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর জন্য চীন নতুন আইন খড়গ হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির ওপরে।

আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এশিয়ার পুঁজিবাজারে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে নানা উদ্বেগে সূচক কমেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পুঁজিবাজারেও। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গত বছর ডেভেলপার কোম্পানিকে ঋণ দিতে চীন নতুন আইন করে। আর এরপর থেকে এভারগ্র্যান্ডের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে।

‘থ্রি রেড লাইনস’ নামের নতুন এ আইন অনুযায়ী, কোনো ভবন নির্মাতা ঋণ নিতে চাইলে তাদের কিছু শর্ত মানতে হবে। অর্থাৎ আগের মতো চাইলেই ঋণ পাওয়া যাবে না৷ আর এ অবস্থায় সম্প্রতি এভারগ্র্যান্ড জানিয়েছে, পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে তারা হয়তো তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না। এ ঘোষণায় অ্যাপার্টমেন্টের জন্য এভারগ্র্যান্ডকে আগাম টাকা দেওয়া ক্রেতা, ঠিকাদার ও বন্ড হোল্ডারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তিন দিন ধরে বেশ কিছু ক্রেতা বর্তমান অবস্থা জানতে এভারগ্র্যান্ড কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছেন। বর্তমানে এভারগ্র্যান্ডের ঋণের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলার বা ২৫ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

আজ মঙ্গলবার জাপানের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। লেনদেন শেষে নিকেই সূচক কমেছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। অবশ্য চীনের শেয়ারবাজার শরৎ উৎসবের জন্য গতকাল সোমবার ও আজ বন্ধ রয়েছে।

শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণেও। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ডাও জোন্স সূচক ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। ইউরোপে একই রকম পতন হয়। জার্মানির ড্যাক্স সূচক ২ দশমিক ৩ শতাংশ ও ফ্রান্সে সিএসি ৪০ কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

এভারগ্র্যান্ড কি হতে চলেছে চীনের লেহম্যান ব্রাদার্স
একসময়কার যুক্তরাষ্ট্রের নামী ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক হিসেবে লেহম্যান ব্রাদার্সকে একনামে চিনত সারা দুনিয়া। কদর বেড়ে যেত সেখানে কাজের সুযোগ পেলে। তবে ৬০ হাজার কোটি ডলার ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে এই ব্যাংক। তারা জানায়, ওই ঋণ আর শোধ করতে পারবে না তারা। বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, ওই পরিণতির দিকেই কি যেতে চলেছে এভারগ্র্যান্ড?

১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এভারগ্র্যান্ড চীনের ২৮০টি শহরে ৯০০টির মতো আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করেছে। চীনে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হচ্ছিল। ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়তে থাকায় এভারগ্র্যান্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা বেশ ভালো চলছিল। ক্রেতাদের কাছ থেকে আগে অর্থ নিয়ে ফ্ল্যাট তৈরি করত এভারগ্র্যান্ড। মূলত ওই ক্রেতার অর্থ দিয়েই ফ্ল্যাট তৈরি করা হতো। এখন দেউলিয়া হওয়ার মুখে পড়ায় ১০ লাখের বেশি ক্রেতা ফ্ল্যাট পাবেন কি না, সে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চীনের প্রবৃদ্ধির অন্যতম বড় চালিকা শক্তি আবাসন ব্যবসা। দেশটির মোট আর্থিক লেনদেনের প্রায় ২৯ শতাংশ হয়ে থাকে এই খাতে। এখন এভারগ্র্যান্ডের বর্তমান অবস্থা চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের লেহম্যান ব্রাদার্সের কথায় মনে করিয়ে দিচ্ছে।