নীতি সুদহার বৃদ্ধি মন্দার শঙ্কা ঘনীভূত করছে

আবারও বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কা আছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কেন রোগোফ। পশ্চিমা বিশ্বে চলছে এখন রেকর্ড মূল্যস্ফীতির যুগ, সেই সঙ্গে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে লকডাউন এখনো আছে—এ সবকিছুকে তিনি ঝড়ের পূর্বাভাস হিসেবেই দেখছেন।

তবে মন্দার সম্ভাবনা এখনো ঝুঁকির পর্যায়েই আছে, এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলার সময় আসেনি বলে মন্তব্য করেন কেন রোগোফ। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সারা বিশ্ব এখন ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কিত। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভসহ প্রায় সব বড় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের মূল কাজ অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের হাতে একটাই অস্ত্র, সেটা হলো নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা। ইতিমধ্যে সব বড় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে। এটা ঠিক হচ্ছে কি না, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে কেন রোগোফ বলেন, মোটেও ঠিক হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ থাকলে ভালো। কিন্তু নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরা অনেক প্রণোদনা পেয়েছেন। এতে তাঁদের হাতে ব্যয় করার মতো অনেক টাকা আছে। ফলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়তি থাকবেই।
কেন রোগোফ আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামলেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে ধরে নিতে হবে। ৩ শতাংশে নামতে হয়তো আরও কয়েক বছর লাগবে, ফেড হয়তো এভাবেই ব্যাখ্যা করবে। কিন্তু চীন যেভাবে একের পর এক সমস্যা তৈরি করেই যাচ্ছে, সেই বাস্তবতায় মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানা মোটেও সহজ কর্ম নয়। বরং নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হলে মন্দার শঙ্কা আরও ঘনীভূত হবে।

নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎসও নীতি সুদহার বৃদ্ধির বিরুদ্ধে। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটের জন্য এক নিবন্ধে লিখেছেন, এখন বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো গণহারে সুদহার বাড়ালে ব্যাপারটা ওভারডোজের মতো হবে। চাহিদা হ্রাস করে বা বেকারত্বের হার বাড়তে দিয়ে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটানোর মানে হয় না। এই নীতি কিছুদিন চললে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে ঠিক, কিন্তু তাতে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হবে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের।

সে জন্য তাঁর মত, সরবরাহ ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট কাঠামোগত ও রাজস্ব নীতি গ্রহণ করা। গরিবদের খাদ্যসহায়তার পাশাপাশি জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়া এবং মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করে কর হ্রাস করা।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস) বলেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সে দেশের মানুষ দৈনন্দিন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ ভ্রমণও কমিয়ে দিয়েছে। একদম প্রয়োজনীয় না হলে মানুষ কেনাকাটাও করছে না। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যে আবারও মন্দার আশঙ্কা করছে তারা। এ অবস্থায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হলে মন্দা আরও ঘনীভূত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

সংজ্ঞা অনুসারে, পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকে মন্দা বলা হয়।