পতন থামছে না ট্রাম্পের সামাজিক মাধ্যম কোম্পানির শেয়ারের
সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল চালু করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেছিলেন, এটি তাঁর প্রচারণায় কাজে লাগবে। সেই সঙ্গে শেয়ারের দাম বাড়লে তিনি লাভবান হবেন। কিন্তু তাঁর সেই আশা খুব একটা পূরণ হচ্ছে না।
সিএনএন জানায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর পর ট্রুথ সোশ্যালের শেয়ারের দাম শুরুতে বাড়লেও কিছুদিন পর থেকে লাগাতার কমছে। ট্রুথ সোশ্যালের মূল কোম্পানি ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের শেয়ারের দাম গত সপ্তাহে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে ট্রুথ সোশ্যালের শেয়ারের দাম ৬৬ দশমিক ২২ ডলারে উঠেছিল। এরপর সেই শেয়ারের দাম তিন-চতুর্থাংশ কমেছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো ট্রাম্প নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শেয়ার আছে মোট ১১ কোটি ৪৭ লাখ। চলতি বছরের ৯ মে এই শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৬২০ কোটি ডলার। তা এখন কমে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে শেয়ারের দাম এভাবে কমার কারণে ব্লুমবার্গের শীর্ষ ৫০০ জন ধনীর তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ট্রুথ সোশ্যালের শেয়ারের দাম যখন বেড়েছিল, তখনই অনেক বাজার বিশ্লেষক বলেছিলেন, এটা ফাটকাবাজি। এই কোম্পানির মৌলভিত্তি এত শক্তিশালী নয় যে শেয়ারের দাম এতটা বাড়তে পারে। এখন শেয়ারের দাম কেবল পড়ছেই। রাজস্ব আয় হচ্ছে খুব কম। সবচেয়ে বড় কথা, সামাজিক মাধ্যমের জগতে ট্রুথ সোশ্যালের অবস্থান খুবই নগণ্য।
টাটল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী ম্যাথু টাটল সিএনএনকে বলেন, এটা যদি ট্রাম্পের কোম্পানি না হতো, তাহলে এই কোম্পানির শেয়ারের দাম এক ডলারে নেমে আসত।
এপ্রিল মাসে সিএনবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন শতকোটিপতি ব্যারি ডিলার বলেছিলেন, ‘বোকারাই’ এই কোম্পানির শেয়ার কেনে। এরপর জুন মাসে সামাজিক মাধ্যম লিঙ্কডইনের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্প মিডিয়ার শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক। এই ডিলার ও হফম্যান উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক দলের বড় অর্থদাতা।
ট্রাম্প মিডিয়ার দুর্বল মৌলভিত্তি ছাড়াও ট্রুথ সোশ্যালের শেয়ারের দাম কমার আরও কিছু কারণ আছে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা। ম্যাথু টাটল বলেন, কমলা হ্যারিস ও ট্রাম্পের সমর্থন প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় ট্রুথ সোশ্যালের শেয়ারের দামে প্রভাব পড়ছে। জো বাইডেন গত ২১ জুলাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ট্রুথ সোশ্যালের বাজারমূল্য প্রায় অর্ধেক কমেছে। এই কোম্পানি পুরোপুরি ট্রাম্পনির্ভর। নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে এই কোম্পানির শেয়ারের দাম আবার বাড়বে। কিন্তু তিনি হেরে গেলে কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে।
এ বিষয়ে ট্রাম্প মিডিয়ার বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে তারা সাড়া দেয়নি।
ট্রাম্প মিডিয়ার হাতে এখনো ৩০ কোটি ডলার নগদ অর্থ ও সম্পদ আছে। এই অর্থ দিয়ে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ট্রাম্প মিডিয়া মাত্র ৮ লাখ ৩৭ হাজার ডলার রাজস্ব আয় করেছে। কিন্তু এই সময় তারা সামাজিক মাধ্যমে স্ট্রিমিং সেবা যুক্ত করেছে; অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস ও ওয়েবে তারা ট্রুথ প্লাস নামের এই স্ট্রিমিং সেবা চালু করেছে।
২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আছে। এরপর তাঁরা শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প ও উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ার বিক্রি করলে দাম আরও পড়ে যেতে পারে। তবে ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের পরবর্তী বিতর্কের পর ট্রুথ সোশ্যালের শেয়ারের দাম বাড়তে পারে।