অপরিশোধিত তেলের দাম ১০০ ডলার ছুঁই ছুঁই

সেঞ্চুরি থেকে আর বেশি দূরে নেই ব্রেন্ট ক্রুডের দাম—আর মাত্র সাড়ে ৫ ডলার।

করোনার তৃতীয় ঢেউ খুব বেশি দূরে যেতে পারেনি। সারা বিশ্বেই ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ। অর্থনৈতিক কাজকর্মে গতি আসায় জ্বালানির চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আসছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল প্রায় ৯৫ ডলারে পৌঁছে গেছে।
এর আগে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮০ ডলার পেরোতেই বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন যেভাবে তা শতরানের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাতে আবারও জ্বালানির দাম বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।

ইতিমধ্যে অপরিশোধিত তেলের দাম গত সাত বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৯৪ দশমিক ৪৪ ডলার। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দর ৯৩ দশমিক ১০ ডলার।

বিশ্বজুড়ে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত থাকলেও সেই হারে তেলের জোগান বাড়ানোর বার্তা এখনো দেয়নি তেল রপ্তানিকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক। সীমিত হারে উৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বঘোষণাই কার্যকর করেছে তারা। এর মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাতের আবহে আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংশয়ের মাত্রা কেবল বাড়ছে। তার জেরে তেলের জোগান ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মহল। মনে করা হচ্ছে, এতে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে পারে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির পূর্বাভাস, এ বছরে বিশ্বে তেলের চাহিদা দিনে ৩২ লাখ ব্যারেল বেড়ে সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায় উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ তেলের জোগান বাড়িয়ে অনিশ্চিত বাজার কিছুটা শান্ত করতে পারে বলে মত তাদের।

গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। আর হিটিং অয়েলের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ। এর আগে জানুয়ারি মাসে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশের বেশি। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ। আর হিটিং অয়েলের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের ওপরে।

এক বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর হিটিং অয়েলের দাম বেড়েছে ৬৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এদিকে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিদ্যুতের বৈশ্বিক চাহিদা ৬ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে বিদ্যুতের মোট চাহিদা বৃদ্ধির অর্ধেকই হয়েছে চীনে। ২০২১ সালে দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা ১০ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে চীনসহ অনেক দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহারের নীতি থেকে বেরিয়ে আসার কারণে তেলের চাহিদা বাড়ছে। তাতে দাম আরও বাড়বে বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।

বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী সরবরাহ বাড়ছে না। এর সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে দাম কমার যে সম্ভাবনা ছিল, তা-ও বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি প্রতি ব্যারেলের দাম ১০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।