ভারতে গরিব মানুষের জন্য মোবাইল ব্যাংক চালু হচ্ছে

২০১৬ সালেই ভারতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং চালু হচ্ছে। ভারতের পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিকে মোবাইল পেমেন্ট ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। এ কোম্পানিগুলোই মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নেতৃত্বে দেবে।
এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোবাইল ফোন গ্রাহকেরা অনেকটা ঘরে বসেই অর্থ লেনদেন করতে পারবেন। ক্যাশ আউট পয়েন্ট থেকে অর্থ নগদায়ন করতে পারবেন। যাঁদের মোবাইল ফোন নেই, তাঁরা নিকটবর্তী যেকোনো মোবাইল সেবাকেন্দ্র থেকে এ সুবিধা নিতে পারবেন। এক লাখ রুপি পর্যন্ত সঞ্চয় করতে পারবেন, আবার সঞ্চয়ের ওপর সুদও পাবেন। গরিব মানুষকে ব্যাংক-ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করতে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশেও নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে।
ভারতে বর্তমানে মোবাইল ফোনের ৯৫ কোটি গ্রাহক রয়েছে। নতুন ব্যাংক-ব্যবস্থায় তাঁরা সবাই এ সুবিধা পাবেন। অনুমোদন পেয়েছে এয়ারটেল, ভোডাফোন, রিলায়েন্স, আইডিয়া ও টেলিনর ইন্ডিয়া। এসব মোবাইল ফোন অপারেটরের ১৪ লাখ রিটেইল পয়েন্ট বা সেবাকেন্দ্র রয়েছে। নতুন চালু হতে যাওয়া ব্যবস্থায় মোবাইল ফোনটি গ্রাহকের জন্য একধরনের ব্যাংক হিসাবের মতো কাজ করবে। তবে কোনো ধরনের ঋণ পাবেন না গ্রাহকেরা।
নতুন দিল্লিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বিল ও মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিস ফর দ্য পুওর বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার পবন বকশী প্রথম আলোকে বলেন, এ মোবাইল পেমেন্ট ব্যাংক-ব্যবস্থা গরিব মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। গরিব মানুষের কাছে মোবাইল ব্যাংক-ব্যবস্থা নিতে হলে প্রযুক্তিনির্ভর নেটওয়ার্ক (মোবাইল নেটওয়ার্ক) দরকার, যা ভারতের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর রয়েছে।
এ বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর রঘুরাম রাজনের বক্তব্য জানতে চেয়ে ই-মেইল করা হয়। ১৯ জানুয়ারি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর রঘুরাম রাজনের একটি বক্তব্য পাঠানো হয়। বক্তব্যে বলা হয়, টেকসই উন্নয়নের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক বাজার চায় ভারত। বিশেষ করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যাঁরা সম্পৃক্ত হয়ে জীবনমানের উন্নতি করতে চান, তাঁদের জন্য এ ধরনের নতুন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। গভর্নরের বক্তব্যে আরও বলা হয়, স্বাভাবিকভাবে মনে করা হয়, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা অনেক বেশি কঠোর থাকে। তবে এখন অর্থনীতির গতিকে আটকে রাখে এমন বাধা দূর করা হচ্ছে। তাই একটি সম্প্রসারণমূলক আর্থিক সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও আর্থিক সেবা দেওয়া যায় এবং জীবনমানের উন্নতি হয়।
ভারতের নীতিমালা: গত ২০১৪ সালের নভেম্বরে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবা চালুর জন্য নীতিমালা চূড়ান্ত করে। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে পাঁচটি মোবাইল ফোন কোম্পানির সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো মূল পেমেন্ট ব্যাংক লাইসেন্স পায়। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক ও রিটেইল শপ এ কনসোর্টিয়ামে অংশীদারি হয়। লাইসেন্স পাওয়া এয়ারটেলের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক ব্যাংক কোটাক মাহিন্দ্রার ২০ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে। রিলায়েন্সের সঙ্গে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়া নতুন উদ্ভাবনী আর্থিক ক্যাটাগরিতে আলীবাবা, অ্যামাজন ও পেপলের মতো ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান পেমেন্ট ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ই-বাণিজ্যের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দেবে গ্রাহককে।
এর আগে ২০০৮ সালে আরবিআই প্রচলিত ব্যাংক-ব্যবস্থার বাইরে আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংককে লাইসেন্স দেয়। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগণের কাছে এ সেবা নিয়ে যেতে পারেনি। তাই নতুন এই উদ্যোগ।
বাংলাদেশের খসড়া: ২০১৫ সালে বাংলাদেশ মোবাইল ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিস বা আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য খসড়া নীতিমালা তৈরি করে। সেখানে শর্ত দেওয়া হয় যে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে কনসোর্টিয়াম করে লাইসেন্স নিতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, মোবাইল ফোন অপারেটরদের ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকতে পারবে না।