মার্কিন অর্থনীতিতে নতুন উদ্বেগ শ্রমিকসংকট

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়লে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লাউড পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) লিন্ডা প্লাজাকে গত বছরের অক্টোবর মাসে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। লিন্ডা জানান, তিনি ৬৫ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু ১ বছর আগেই তাঁর চাকরি চলে যায়। এই মুহূর্তে তাঁর পুরোনো চাকরির মতো অন্য চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কেউ যদি নিয়োগ দিতে চান, তাহলে তাঁর চেয়ে কম বয়সী ও বেশি শিক্ষিত কাউকে নিয়োগ দেবেন। তবে আশপাশে খুচরা বা খাদ্য সরবরাহের যেসব চাকরি পাচ্ছি, তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে।

‘আমি বলতে চাই, সবকিছু ঠিক নেই,’ বলেন, লিন্ডা।
করোনাভাইরাস মহামারির প্রায় দুই বছর হতে চলল। শুরুতে ধাক্কা খেলেও যুক্তরাষ্ট্র পরে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেখানে বেকারত্বের হার এখন আর অত বেশি নয়। মোদ্দা কথা, বেকারত্বের সঙ্গে তারা আর লড়াই করছে না। তবে এক সমস্যা যায়, আরেক সমস্যা আসে। সেটা হলো, শ্রমিক ঘাটতি। এটাই এখন বড় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে, কিন্তু শ্রমিক ঘাটতিসহ মহামারি–যুগের অনেক সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। ভাইরাস সম্পর্কে উদ্বেগ বড় একটি অংশের মানুষকে শ্রমবাজারে ফিরতে দিচ্ছে না।
চাকরির বাজারে আমেরিকানদের শতকরা হার দেশটির মোট শ্রমশক্তি দিয়ে হিসাব করা হয়। এই শ্রমশক্তির মধ্যে কর্মরত চাকরিজীবী ও সক্রিয় চাকরিপ্রার্থী উভয়কেই ধরা হয়। বর্তমানে সেই হার মহামারি শুরুর আগের সময়ের কাছাকাছি পৌঁছেছে। অর্থাৎ করোনা সংক্রমণের শুরুতে বেকারত্বের হার যে বেড়েছিল, তা এখন কমেছে।
ইউএস ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকসের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, গত নভেম্বর পর্যন্ত শ্রমবাজারে মার্কিনিদের অংশগ্রহণ ছিল ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ। মহামারির সর্বোচ্চ সময়ে এই হার অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল, অর্থাৎ বেকারত্ব বেড়ে গিয়েছিল তখন। কিন্তু করোনার প্রকোপ কাটিয়ে শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।

তবে পুনরুদ্ধারের এই হিসাবে ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের কাজে যোগ দেওয়ার হার বাড়লেও কমেছে ৫৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীর সংখ্যা। অন্যদিকে পুরুষের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে নারীর সংখ্যা।
এর কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে কর্মজীবী মা-বাবারা তাঁদের সন্তানদের পর্যাপ্ত যত্ন নিয়ে চিন্তায় আছেন। সে কারণে গত বছর করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময়ে বেশিসংখ্যক নারী শ্রমবাজার ঝরে পড়েছেন, যাঁরা এখনো কাজে ফেরেননি। পাশাপাশি কর্মস্থলে সশরীরে কাজের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি এখনো তাঁদের ভাবাচ্ছে। ৫৫ বছরের বেশি বয়সীরা স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে কাজে ফিরছেন না।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এই শ্রম ঘাটতির কারণে দেশটিতে চাহিদার বিপরীতে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন করে তুলেছে। বাজারের বাইরে থাকা এসব মানুষকে পুনরায় কর্মক্ষেত্রে ফিরিরে আনতে ঠিক আরও কত সময় লাগবে, তা নিয়েও আছে সংশয়।
এদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরন, যে কারণে সবার মনে আবারও স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তরুণদের বেকারত্বের হার কমলেও মহামারির এই পরিস্থিতিতে ক্যালিফোর্নিয়ার লিন্ডা প্লাজার মতো বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া বয়স্ক কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসা আরও কঠিন করে তুলতে পারে।