মিয়ানমারে সেনা সমর্থিত কোম্পানির পণ্য বর্জন

ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের রাজনৈতিক পালাবদলের প্রভাব এখন ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়তে শুরু করেছে। ভোক্তারা যেমন সামরিক বাহিনীর কোম্পানি নির্মিত পণ্য বর্জন শুরু করেছে, তেমনি কর্মীরা সেই সব কোম্পানি বর্জন করতে শুরু করেছে। ফলে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন রাজনৈতিক পক্ষ নিতে শুরু করেছে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কোম্পানি মিয়ানমার ব্রিউয়ারির পণ্য সুপারমার্কেট ও বড় কোম্পানি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ভোক্তারাও একইভাবে এ–জাতীয় কোম্পানির পণ্য বর্জন শুরু করেছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই মানুষ রাস্তায় নেমেছে। জনবিক্ষোভ দমনে সেনা সরকারও দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর গুলিতে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

পণ্য বয়কট শুরু হওয়ার আগে থেকেই মিয়ানমারের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়ে। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি কর্মীরা কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেন। এতে ব্যাংকিং খাত স্থবির হয়ে পড়ে।

গণবিক্ষোভ দীর্ঘায়িত হলে ব্যবসা-বাণিজ্য এমনিতেই মার খাবে। সে কারণে মিয়ানমারের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসার ভবিষ্যৎ
নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠছে। টোকিওভিত্তিক ঝুঁকি বিশ্লেষক রোমেইন কাইলড ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘মিয়ানমারে ব্যবসারত কোম্পানিগুলোকে এখন ভেবে দেখতে হবে, দেশটিতে ব্যবসা করা এখন সমীচীন কি না। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা ধরনের ঝুঁকির মুখেও তাদের এখন পড়তে হবে।

মিয়ানমারের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন মিয়ানমার ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বর্জনের ডাক দিয়েছে। অভ্যুত্থানের দুই দিন পর সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। এরপরই তারা এই ডাক দেয়।

এদিকে মিয়ানমারের বৃহত্তম স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিবৃতি দিচ্ছেন। এই বিবৃতিতে তাঁরা খুব কৌশলে কথা বলেছেন—শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়া এবং এই দ্বন্দ্ব নিরসনের আহ্বানের মাঝামাঝি অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা। বিবৃতিতে সই করেছে জাহাজ কোম্পানি মেয়ার্সক, কোকা-কোলা, ইএনআই, টোটাল, উরিডু ও টেলেনর। মিয়ানমারের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তারা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা মিয়ানমারের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার আলোকে শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রত্যাশা করছে।

এদিকে গত সপ্তাহে মিয়ানমারের মার্কিন ও ইউরোপীয় চেম্বার অব কমার্স সাহসী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সামরিক সরকার বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানালেও তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। চেম্বারের ফরাসি ও ব্রিটিশ কমিটি জানিয়েছে, ঘটনা সত্য।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান চালানোর কারণে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো অনেক দিন ধরেই সু চি সরকার এবং বিদেশি কোম্পানিগুলোকে সামরিক বাহিনী–সমর্থিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার আহ্বান জানাচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর কিছু কিছু কোম্পানির লক্ষ্য বদলে গেছে।