রুপির পড়তি মান নিয়ে ভারতে শঙ্কা

ভারতীয় রুপি। ছবি: রয়টার্স

ডলারের সাপেক্ষে ভারতীয় মুদ্রা রুপির মান ক্রমেই কমছে। গত শুক্রবার তা ছিল সর্বনিম্ন। এক ডলার এই সেদিনই প্রথম ৭৮ দশমিক ৩৩ রুপিতে ওঠে। রুপির দাম হ্রাসের জন্য রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) গভর্নর শক্তিকান্ত দাস যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের কিছু দেশের আর্থিক নীতি এবং দ্রুত সুদ বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। তবে তাঁর আশ্বাস, এই পতনে রাশ টানতে বদ্ধপরিকর আরবিআই।

জানা গেছে, রিজার্ভ ব্যাংকের বড় মাথাব্যথা এখন রুপির দাম। তা কতটা পড়েছে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তা ঠিক কী গতিতে পড়েছে। এতে বৈদেশিক বাণিজ্যে বেশি প্রভাব পড়ে, দ্রুত আস্থা হারান বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। দুর্বল রুপির কারণে তেল ও পণ্যের কাঁচামাল আমদানির খরচ বাড়ছে। ভারতে মূল্যস্ফীতির হার সে কারণে বেড়ে যেতে পারে। বিদেশি মুদ্রার মজুতও দুর্বল হবে। খবর ইকোনমিক টাইমসের একই সঙ্গে পড়ছে ভারতের শেয়ারবাজার। বিশ্লেষকেরা বলেন, যেসব কারণ শেয়ারবাজারকে সমস্যায় ফেলেছে, সেগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সূচকের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। অন্তত ছয় মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের চড়া মূল্যস্ফীতিতে রাশ টানা কিংবা বিশ্ববাজারে কাঁচামালের জোগান বাড়বে বলে মনে হয় না। বাজারসংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে নীতি সুদহার বাড়ছে, কিন্তু তাতে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিই বেশি মার খাবে বলে ধারণা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। সে জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজারে শেয়ার বিক্রি করে অর্থ তুলে নিচ্ছেন।

জিওজিৎ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট ভি কে বিজয়কুমার ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ায় তা আকর্ষণীয় হচ্ছে। সুদ বাড়ায় লাভজনক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ডবাজার। ফলে ভারতের শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ সেখানে চলে যাচ্ছে। সেটা একটা কারণ, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আর্থিকভাবে অনেক উন্নত বলেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সে দেশের বন্ডবাজারে চলে যাচ্ছেন।

তবে শুধু রুপি নয়, দক্ষিণ এশিয়াসহ অনেক দেশেই ডলারের সাপেক্ষে স্থানীয় মুদ্রার মান পড়ছে। ইউএস ডলার ইনডেক্স অনুযায়ী, গত ২০ বছরের মধ্যে ডলারের মান এখন সবচেয়ে বেশি।

বিশ্লেষকদের মতে, এ মুহূর্তে ডলারের সাপেক্ষে অন্যান্য মুদ্রার দামের পতনের বহুবিধ কারণ থাকলেও প্রধান কারণ দুটি। এক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পেট্রোলিয়াম থেকে রকমারি পণ্য—সবকিছুরই দাম বেড়েছে। অর্থাৎ ডলারের অঙ্কে সেই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে।

দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়েছে। সারা পৃথিবীতে আর্থিক ক্ষেত্রে তুমুল অনিশ্চয়তা চলছে—এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করেন। ফলে ডলারের মতো হার্ড কারেন্সির কদর বাড়ে। ফলে ডলারের কাটতি বেড়ে যাওয়াও তার মান বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।