মার্কিন ডলারের আধিপত্য শেষের দিকে, মনে করেন শীর্ষ রুশ ব্যাংকার

ডলার
ছবি: রয়টার্স

মস্কোর অন্যতম একজন শীর্ষ ব্যাংকার বলেছেন, মার্কিন ডলারের আধিপত্যের দিন শেষ হয়ে আসছে। কারণ হিসেবে তিনি চীনা মুদ্রা ইউয়ানের উত্থান ও রাশিয়াকে বাগে আনার পশ্চিমা ব্যর্থ চেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে বিশ্ববাসী পশ্চিমের এই ব্যর্থ চেষ্টার ঝুঁকির মুখেও পড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ভিটিবির প্রধান নির্বাহী আঁদ্রেই কোস্তিন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, মার খাচ্ছে বিশ্বায়ন। অন্যদিকে, চীন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির ঝান্ডা তুলে নেওয়ার দিকে এগোচ্ছে।

এ পরিস্থিতিকে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আঁদ্রেই কোস্তিন বলেন, এটা এখন আর স্নায়ুর পর্যায়ে নেই, তা প্রকৃত যুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছে। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘হট ওয়ার’, যা স্নায়ুযুদ্ধ বা ‘কোল্ড ওয়ার’-এর চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক।

এদিকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের দেশে থাকা রাশিয়ার অনেক সম্পদ জব্দ করেছে। কোস্তিন মনে করেন, এ পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার খাবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেক দেশ এখন ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য মুদ্রায় বাণিজ্য করছে এবং চীন মুদ্রার ওপর নিষেধাজ্ঞার নীতি থেকে সরে আসছে।

কোস্তিন আরও বলেন, ‘চীন বুঝতে পারছে, ইউয়ানকে রূপান্তর–অযোগ্য মুদ্রা হিসেবে রেখে তাদের পক্ষে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি হওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম বন্ডে রিজার্ভ বিনিয়োগ করে রাখা চীনের জন্য বিপজ্জনক।

বিশ শতকের গোড়া থেকেই মার্কিন ডলার বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুদ্রা। ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিংকে হটিয়ে তারা এ স্থান অধিকার করে। এদিকে বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যান বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে ডিডলারাইজেশন বা ডলারের আধিপত্য খর্ব হতে শুরু করেছে।

গত ৪০ বছরে চীনের ব্যাপক উত্থান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফল ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণসীমা নিয়ে সম্প্রতি যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলো, তাতে মার্কিন ডলারের আধিপত্য নতুন করে নজরদারিতে এসেছে। এ বাস্তবতায় কোস্তিন বলেছেন, রাশিয়া এখন তৃতীয় দেশের সঙ্গেও ইউয়ানে লেনদেনের বিষয়ে আলোচনা করছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে কোস্তিন বলেন, পশ্চিমাদের চাপে রুশ অর্থনীতি ভেঙে পড়বে না। এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জন্য রাশিয়ার প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ করেছে। যদিও ২০২৪ সালের জন্য পূর্বাভাস ২ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশ করেছে।

এই শীর্ষ ব্যাংকার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা খারাপ বিষয়, সে কারণে আমাদের ভুক্তভোগী হতে হয়; যদিও আমাদের অর্থনীতি খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে। একই সঙ্গে আমরা ধারণা করছি, নিষেধাজ্ঞার তীব্রতা আরও বাড়বে, আরও অনেক পথ বন্ধ করা হবে। তবে আবার আমরা অন্য পথ খুঁজে নেব।’

এ ছাড়া রুশ অর্থনীতি উন্মুক্ত থাকবে বলেই আঁদ্রেই কোস্তিন বিশ্বাস করেন।
রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ২০২২ সালে ডলারের ব্যবহার অনেকটাই কমেছে। সাধারণত মার্কিন অর্থনীতি খুব শক্তিশালী কিংবা খুব দুর্বল থাকলে ডলারের মূল্য বাড়ে। গত বছর মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে সোনা ও অন্যান্য মুদ্রায় রিজার্ভ রাখা শুরু করে।

ইয়াহু ফাইন্যান্সের এক সংবাদে বলা হয়েছে, গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলারের বাড়তি দরের কারণে বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রার ভান্ডারে ডলারের হিস্যা ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে; আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে যা ছিল ৫৫ শতাংশ। অথচ ২০০০ সালে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভে ডলারের হিস্যা ছিল ৭১ শতাংশ।

রিজার্ভে ডলারের হিস্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ইউরো ও চীনা ইউয়ানের হিস্যা বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ হিসেবে সোনা কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে।