চীনে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম

চীনফাইল ছবি: রয়টার্স

অনেক আশঙ্কার মধ্যেও গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে চীনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু গত বছর দেশটিতে এফডিআইয়ের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা ১৯৯০-এর দশকের পর সর্বনিম্ন। চীনের যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সেখান থেকে উত্তরণে দেশটির আরও বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন।

ব্লুমবার্গের সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দেশটির স্থিতিপত্রে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের দায় বেড়েছে ৩৩ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৮২ শতাংশ কম। এই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বোঝা যায় যে দেশে ঠিক কী পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এল। ফলে দেখা যাচ্ছে যে চীনে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি কমছে এবং গত বছরে আসা এফডিআই ১৯৯৩ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

এফডিআইয়ের এই চিত্রে কোভিডজনিত লকডাউন ও পরবর্তী সময়ের দুর্বল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয়েছে। এমনকি গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এফডিআইয়ের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে, ১৯৯৮ সালের পর যা এই প্রথম। তবে এরপর এফডিআই কিছুটা বেড়েছে। শেষ প্রান্তিকে চীনে ১৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছে, যদিও তা আগের বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ কম।

সেই সঙ্গে চীনে যেসব বিদেশি কোম্পানি কাজ করছে, তাদের মুনাফাও কমেছে। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, চীনে কার্যরত বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে।

এর আগে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর চীনে নতুন এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই পরিসংখ্যানে অবশ্য কার্যরত বিদেশি কোম্পানিগুলোর পুনর্বিনিয়োগ আমলে নেওয়া হয়নি, সে জন্য এই পরিসংখ্যান অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হয়।

চীনের এফডিআইয়ের এই চিত্র দেখে বোঝা যায়, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও অন্যত্র বেশি সুদের আশায় চীন থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।

বিশ্বের অন্যান্য বড় অর্থনীতি যেখানে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে, সেখানে চীনে মূল্যহ্রাসের ধারা দেখা যাচ্ছে। ফলে অন্যান্য দেশ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করলেও চীন কমাচ্ছে। সে কারণে বিনিয়োগকারীরা উচ্চ সুদের আশায় অন্যান্য দেশে বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছে। চীনে কার্যরত জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত বছর অধিকাংশ কোম্পানি হয় বিনিয়োগ অপরিবর্তিত রেখেছে, না হয় হ্রাস করেছে। অধিকাংশ কোম্পানি মনে করছে, ২০২৪ সালও ভালো যাবে না।

এই পরিস্থিতিতে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আবার চীনমুখী করতে বেইজিংকে আরও তৎপর হতে হবে। তারা এখন যা করছে, তা যথেষ্ট নয়। তবে এত নেতিবাচক খবরের মধ্যে কিছু আশার ঝলক আছে। সেটা হলো, গত বছর চীনে জার্মান কোম্পানিগুলোর এফডিআই রেকর্ড ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও জার্মানি চীনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে চায়, যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিরাপত্তার কারণে এসব বিনিয়োগের নিরীক্ষা করবে। গত বছর পর্যন্ত জার্মানির মোট এফডিআইয়ের মধ্যে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ চীনে বিনিয়োগ করা আছে—২০১৪ সালের পর যা সর্বোচ্চ।