এবার অর্থনৈতিক মডেল রূপান্তর করতে চায় চীন

চলতি বছরে ৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে চীন। এই প্রবৃদ্ধি অর্জনে চীন বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে। মূলত উন্নয়ন মডেলের রূপান্তর, শিল্পের অতি সক্ষমতা রোধ, সম্পত্তি খাতের ঝুঁকি হ্রাস করা ও স্থানীয় সরকারের অপচয় কমাতে কাজ করবে দেশটির সরকার।

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং মঙ্গলবার এ কথা বলেছেন। তিয়েনআনমেন স্কয়ারের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের আইনসভা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) বার্ষিক সভায় তাঁর প্রথম কর্ম প্রতিবেদন পেশ করার সময় চীনা প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গত বছরও চীনের প্রবৃদ্ধি এ রকম ছিল। তবে চলতি বছর এই হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে সরকারি প্রণোদনা বাড়াতে হবে। চীনের অর্থনীতি এখনো রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল বলে সরকার কত প্রণোদনা দিচ্ছে, তার ওপর দেশটির প্রবৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভর করে। ঠিক সে কারণে দেশটির স্থানীয় সরকারের ঋণ পাহাড়সম হয়ে উঠেছে।

চীনের কোভিড-উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম খুব একটা গতি পায়নি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে দেশটির অর্থনীতির গভীর কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা উন্মোচিত হয়েছে। একদিকে দেশটির পারিবারিক ভোগ ব্যয় কমে যাচ্ছে, আরেক দিকে বিনিয়োগ থেকে লভ্যাংশ প্রাপ্তির পরিমাণও কমে যাচ্ছে। তাই এখন নতুন উন্নয়ন মডেল প্রণয়নের দাবি উঠেছে।

সারা বিশ্বের অর্থনীতি যেদিকে যাচ্ছে, চীনের অর্থনীতি যাচ্ছে ঠিক তার বিপরীতে। সব বড় অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তি হলেও চীনে উল্টো মূল্যহ্রাস হচ্ছে। চাহিদা কমে যাচ্ছে দেশটিতে। আবাসন ও ঋণসংকটে সামগ্রিকভাবে জর্জরিত হচ্ছে চীনের অর্থনীতি।

এই পরিস্থিতিতে চীন বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন ও উৎপাদনে চীন আরও বেশি সম্পদ বিনিয়োগ করবে। প্রধানমন্ত্রী লি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উৎপাদনের নতুন খাত তৈরির নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এসব করা হবে।

এ ছাড়া উৎপাদন খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সীমা তুলে নেওয়াসহ টেলিকম ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে। এ ছাড়া উদীয়মান শিল্পের বিকাশে পরিকল্পনা করা হবে বলে রয়টার্সের সংবাদে জানা গেছে।

চীন সরকারের পরিকল্পনা হলো চলতি বছর বাজেট ঘাটতি ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা; গত বছর যা ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তারা দীর্ঘ মেয়াদে এক লাখ কোটি ইউয়ান বা ১৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বন্ড বাজারে ছাড়তে চায়। এটা অবশ্য বাজেটের অন্তর্ভুক্ত নয়।

স্থানীয় সরকারের বিশেষ বন্ড ছাড়ার কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি ইউয়ান; ২০২৩ সালে যা ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার। একই সঙ্গে চীন ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশ এবং চলতি বছর ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চায়। এর মধ্য দিয়ে তারা বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে চায়।

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জিয়া কিংজিয়ে রয়টার্সকে বলেন, চীন সরকার অর্থনীতিতে খুব একটা প্রণোদনা দিতে চায় না; সেই সঙ্গে ঋণের রাশও টেনে ধরতে চায়।

বিশ্লেষকেরা আশা করছেন, চীন সরকার ভবিষ্যতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের পূর্বাভাস, চলতি বছর চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ; ২০২৮ সালে যা ৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

সরকারি পরিসংখ্যানে গত বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হয়নি; ২০২৩ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালেও ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চীনের জন্য এটা যথেষ্ট নয়।