চীনে ১৪ বছরের মধ্যে ভোক্তামূল্য সূচকের সবচেয়ে বড় পতন কেন

চীনরয়টার্স

জানুয়ারিতে চীনের ভোক্তামূল্য সূচক (সিপিআই) গত ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে কমেছে। একই সঙ্গে দেশটির উৎপাদন পর্যায়েও পণ্যমূল্য কমেছে। এই বাস্তবতায় চীনের নীতিপ্রণেতারা আরও চাপে পড়ে গেছেন যে অর্থনীতিকে কীভাবে এই মূল্যহ্রাসের চাপ থেকে বের করে আনা যায় এবং কীভাবে অর্থনীতিতে আরও আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করা যায়।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি গত বছরের শেষ সময় থেকে এই মূল্যহ্রাসের চাপে পড়েছে, যে কারণে দেশটির নীতিপ্রণেতারা প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগাতে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এটা ঘটছে এমন সময়ে যখন বিশ্বের উন্নত দেশগুলো উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের তথ্যানুসারে, জানুয়ারিতে চীনের ভোক্তামূল্য সূচকের পতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, আগের মাস অর্থাৎ ডিসেম্বরে যার পতন হয়েছিল শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এই হিসাব এক বছরের আগের একই সময়ের তুলনায় করা হয়েছে। তবে গত ডিসেম্বরের তুলনায় গত জানুয়ারিতে চীনের সিপিআই সূচক শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে আর ডিসেম্বরে গত নভেম্বরের তুলনায় বেড়েছিল শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।

জানুয়ারিতে চীনের সিপিআই সূচকের যে পতন হয়েছে, তা ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরের পর সবচেয়ে বেশি। মূলত খাদ্য মূল্যসূচক অনেকটা কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা হচ্ছে, চীনের অর্থনীতি ও ভোক্তাদের আচরণে এই প্রবণতা গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে যেতে পারে।

পিন পয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিউয়ি ঝ্যাং বলেছেন, চীনের সিপিআই সূচক দেখে মনে হচ্ছে, সে দেশে এই মূল্যহ্রাসের চাপ দীর্ঘস্থায়ী হবে। সে জন্য দেশটির নীতিপ্রণেতাদের এখনই এ বিষয়ে দ্রুত ও আগ্রাসী ব্যবস্থা নিতে হবে।

কয়েক বছর ধরে চীনের অর্থনীতিতে এই ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশটিতে দীর্ঘদিন কোভিডজনিত বিধিনিষেধ থাকার পর ২০২২ সালের শেষ দিকে যখন সেগুলো পুরোপুরি তুলে নেওয়া হলো, তখন ধারণা করা হয়েছিল, অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগবে। কিন্তু দেশটির কিছু কাঠামোগত সমস্যার কারণে অর্থনীতিতে গতি আসছে না বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। বিশেষ করে আবাসন খাতের ক্রমবর্ধমান সংকট ও স্থানীয় সরকারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

চীনের অর্থনীতিতে রপ্তানি খাতের ভূমিকা এখনো বেশি। বৈশ্বিক অর্থনীতির চাহিদা কমে যাওয়ার তাদের রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি জরিপে দেখা গেছে, গত জানুয়ারিতে চীনের বৃহৎ উৎপাদন খাত সংকুচিত হয়েছে।

এদিকে চীনের সিপিআই সূচক দুর্বল হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির স্টক মার্কেট সাময়িকভাবে গতি হারিয়েছিল, যদিও পরে তা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। মূলত নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন সহায়ক ভূমিকার কারণে শেয়ারবাজার দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

সরকারি পরিসংখ্যানে গত বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হয়নি; ২০২৩ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালেও ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশের জোগানদাতা আবাসন খাতের অবস্থা খুবই করুণ। ফ্ল্যাট বিক্রি কমে যাওয়ার পাশাপাশি দামও কমে গেছে। এতে মালিকদের আয় কমে গেছে, শ্রমিকেরাও আগের বছরের চেয়ে কম আয় করছেন। এসব কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে সংকোচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বেকারত্ব।

এসবের সম্মিলিত ফল হলো, জানুয়ারিতে দেশটির খাদ্য ও জ্বালানিবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ; আগের মাস ডিসেম্বরে যা ছিল শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে ২০২৩ সালে দেশটির সিপিআই সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, যদিও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ শতাংশ। এ নিয়ে টানা ১২ বছর চীনের মূল্যস্ফীতি সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম থাকার রেকর্ড গড়ল।