এবার রাশিয়া থেকে তেল কিনবেন মুকেশ আম্বানি, দাম দেবেন রুবলে

মুকেশ আম্বানিছবি: এএফপি ফাইল ছবি

রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি তেল কেনার চুক্তি করেছে ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির কোম্পানি। চুক্তির মেয়াদ এক বছর এবং এই তেল মার্কিন ডলার বা ভারতীয় রুপিতে নয়, বরং রুশ মুদ্রা রুবলে কেনা হবে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে রাশিয়ার কোম্পানি রনসেফের।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী রিলায়েন্স প্রতি মাসে ৩০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনবে। সেই হিসাবে বছরে ৩ কোটি ৬০ লাখ ব্যারেল তেল রাশিয়া থেকে কিনবে আম্বানির কোম্পানি।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ পশ্চিমের দেশগুলো রাশিয়ার ওপর কয়েক শ বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এসব নিষেধাজ্ঞার ধাক্কায় প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার কিছুটা ক্ষতি হলেও পরবর্তীকালে তারা অনেকটা সামলে নেয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, চলতি বছর বিশ্বের উন্নত অর্থনীতিগুলোর মধ্যে রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে সবচেয়ে বেশি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আরেকটি ফল হলো ডিডলারাইজেশনের গতি বৃদ্ধি। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রুবল ও ইউয়ানে বাণিজ্য করছে রাশিয়া। সেই ধারাবাহিকতায় আম্বানিরা রুবলে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েক বছর ধরে রাশিয়ান মুদ্রা রুবলের দর কমছে; বর্তমানে তা ভারতীয় রুপির চেয়েও সস্তা। এক রুবল বর্তমানে ভারতীয় ৯৩ পয়সার সমান।

ভারতীয় মুদ্রার দর বেশি হওয়ায় এই মুদ্রায় তেলের ব্যবসা করলে রাশিয়ার তেমন একটা লাভ হতো না। রিলায়েন্সের সঙ্গে চুক্তির শর্ত নির্ধারণের সময় পুতিন সেই বিষয়টিও মাথায় রেখেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক সংবাদে বলা হয়েছে।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন হয়েছে, তা হলো মধ্যপ্রাচ্যের বদলে ভারতের জ্বালানি আমদানির বড় উৎস হয়ে উঠেছে রাশিয়া। এত দিন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে চীনা ইউয়ান ও সৌদি রিয়েলে দাম পরিশোধ করছিল ভারত। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতের মুদ্রা রুপিতে তেলের দাম দেওয়া হচ্ছিল রাশিয়াকে। কিন্তু এবার রুবলে মূল্য পরিশোধ করতে হবে আম্বানিকে।

রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়ার থেকে কেনা তেলের দাম এইচডিএফসি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। সেখান থেকে অর্থ যাবে রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ব্যাংকে। এই দুই ব্যাংকের মধ্যেও এ বিষয়ে চুক্তি হয়েছে।

এই মুহূর্তে বিশ্বের বৃহত্তম তেল পরিশোধন কমপ্লেক্স পরিচালনা করছে রিলায়েন্স। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ভারতের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। রাশিয়া থেকে তেল কিনে সেই তেলে ব্যবসা করবে ভারত—বিনিয়োগের কয়েক গুণ বেশি অর্থ সেখান থেকে তুলে নেবে তারা।

এ ছাড়া তেল পরিশোধন করে ভারতের বাজারের জন্য তেলজাত পণ্য তৈরি করবে রিলায়েন্স। সেই পণ্য ভারতের বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি করা হবে। অর্থাৎ এই তেল ও তেলজাত পণ্য রপ্তানি করে ভারত ডলার আয় করতে পারবে।

ভারতের রপ্তানি পণ্যের ভান্ডারে দ্বিতীয় স্থানে আছে পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য। ভারতের বাজারে খনিজ তেল থেকে প্রস্তুত করা দ্রব্যের চাহিদা রয়েছে বিদেশে। আম্বানির সঙ্গে রাশিয়ার চুক্তিতে দেশের রপ্তানিশিল্প সমৃদ্ধ হতে পারে।

ফলে এই চুক্তিতে আম্বানির দূরদর্শী মনোভাব খুঁজে পাচ্ছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ; পূর্ব ইউরোপও যুদ্ধবিধ্বস্ত। ফলে তেলের খনিসমৃদ্ধ একাধিক দেশ ঝুঁকির মধ্যে আছে।

মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সত্ত্বেও তেলের দাম খুব একটা বাড়েনি। ওপেক তেল উৎপাদনের বিষয়ে আগামী দিনে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার ওপর তেলের দাম অনেকাংশে নির্ভর করবে। তবে বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক চীনের অর্থনীতিতে গতি আসছে। ফলে তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে—সেই পরিস্থিতি বিচার করেই আম্বানি এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছেন বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।