ইসরায়েলে হামলা সোনার চাহিদা বাড়াতে পারে, লাভ হবে ডলারের

ইসরায়েলে এখন যা ঘটছে, তার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন বিনিয়োগকারীরা। অনেকে একে দেখছেন বাজারের প্রতি ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি হিসেবে। কেউ কেউ আবার মনে করছেন, সহিংসতার কারণে বিনিয়োগকারীরা সেসব দেশে চলে যেতে পারেন, অর্থ যেখানে নিরাপদ থাকবে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের বন্দুকধারীরা শনিবার ইসরায়েলের মধ্যে ঢুকে পড়েন। সেখানে তাঁরা নজিরবিহীন হামলা চালান।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব এই হামলার নিন্দা করেছে এবং ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়ার কারণে সোনা ও ডলারের মতো সম্পদ কেনার দিকে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকে পড়তে পারেন। এ ছাড়া, বিক্রি আরও বাড়তে পারে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের। বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই এখন আগ্রাসীভাবে মার্কিন ট্রেজারি বন্ড কিনছেন।

স্পার্টান ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের বাজারবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ পিটার কারডিলো বলেন, কেন সম্পদের ঝুড়িতে সোনা রাখা দরকার, এটি তার একটি উদাহরণ। বিশ্বে যখন টালমাটাল করা ঘটনা ঘটে, তখন তা থেকে বাঁচতে এটাই সবচেয়ে ভালো পন্থা।

তিনি আরও মনে করেন যে এ ঘটনা থেকে ডলার সুবিধা পাবে। তিনি বলেন, যখনই বিশ্বের কোথাও এমন ঘটনা ঘটে, তখন ডলার শক্তিশালী হয়।

কয়েক সপ্তাহ ধরেই আর্থিক বাজারে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার উঁচুতে বহাল রাখা হবে। ফলে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়েই চলেছে। একই সঙ্গে ডলারের দামও বাড়ছে। যদিও এ সময় শেয়ারের দাম কমেছে, তবে গত সপ্তাহে এই পতনের ধারা থেমেছে।

ইসরায়েলের পরিস্থিতি নিয়ে অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান জেকবসেন বলেন, আর্থিক বাজারের জন্য এটি বিশাল কোনো ঘটনা হবে কি না, তা নির্ভর করবে এটি কত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তার ওপর। এর মধ্যে অন্যরা জড়িয়ে পড়ে কি না, সেটির ওপরও তা নির্ভর করবে।

তেলের মূল্যের ওপর এই ঘটনার কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়েও ভাবছেন ব্রায়ান জেকবসেন। ইরান তেলের উৎপাদন বাড়িয়েছে। তবে হামাসের এই হামলার প্রশংসা করেছে তেহরান এবং লেবাননে তাদের মিত্র হিজবুল্লাহ।

ব্রায়ান জেকবসেন বলেন, ইরান তেলের উৎপাদন বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা যদি পর্দার আড়ালের আলোচনায় কোনো অগ্রগতি অর্জন করেও থাকে, হামাসের হামলাকে উদযাপন করার কারণে তা নাটকীয়ভাবে খর্ব হবে। তেলের উৎপাদন কমে গেলে তাতে সমস্যা হবে। কিন্তু তা মারাত্মক কোনো ব্যাপার হবে না।

অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, মূল দেখার বিষয় হবে সৌদি আরব কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। ইসরায়েল ও সৌদি আরবে মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন।

ফ্লোরিডা–ভিত্তিক কাম্বারল্যান্ড অ্যাডভাইসরসের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ডেভিড কটক বলেন, ওয়াশিংটনে সবকিছু ঠিকঠাকমতো চলছে না, সে কারণে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থিকে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। রিপাবলিকানরা তাঁর উত্তসূরি খুঁজছেন। অন্যদিকে, বাজেট নিয়ে লড়াই একরকম নিশ্চিত।

ডেভিড কটক বলেন, ‘পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হতে পারে বলে আমি উদ্বিগ্ন। এমন পরিস্থিতি হলে মার্কিন অঙ্গীকার ও মার্কিন প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওয়াশিংটনে যে অবস্থা, তাতে করে এর ঘাটতি রয়েছে।’