মার্কিন নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ঋণে রেকর্ড বৃদ্ধি
উঁচু মূল্যস্ফীতির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কেনাকাটা থেমে নেই। সেই কেনাকাটার জোরে দেশটির অর্থনীতি চাঙা, কিন্তু তা করতে গিয়ে মার্কিনরা ক্রেডিট কার্ডে বিপুল পরিমাণে ঋণ করেছেন। তবে সেই ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না তাঁরা। দেশটির জাতীয় ঋণ যেমন সীমা ছাড়িয়ে গেছে, তেমনি নাগরিকদের ঋণও উল্কার গতিতে বাড়ছে।
ফেডারেল রিজার্ভের নিউইয়র্ক শাখার ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে মার্কিন নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ডের ঋণ ১ দশমিক ০৮ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৮ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। সিএনএন জানিয়েছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তা বেড়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা বেড়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
১৯৯৯ সাল থেকে ফেডারেল রিজার্ভ এই হিসাব রাখা শুরু করার পর বার্ষিক হিসেবে এটা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এ ছাড়া বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক ঋণ ১ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ দশমিক ২৯ ট্রিলিয়ন বা ১৭ লাখ ২৯ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে দেড় বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, যদিও সম্প্রতি তার হার খানিকটা কমে এসেছে। তা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধ করা মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক পরিবার ঋণ পরিশোধে খেলাপ করছে। অর্থাৎ ৯০ দিন তার চেয়ে বেশি সময় ধরে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না, এমন পরিবারের সংখ্যা এখন ২০১১ সালের শেষভাগের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।
বিশ্লেষকেরা এই পরিস্থিতির কারণ হিসেবে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা উল্লেখ করেছেন। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ব্যাংকরেটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক টেড রসম্যান সিএনএনকে বলেন, গাড়ি কেনা বাবদ বন্ধকি ঋণ খেলাপের হার এখন আর্থিক সংকটকালের চেয়েও বেশি, সে জন্য গাড়ির দাম বেড়েছে। এ ছাড়া আগের চেয়ে বেশি মানুষ এখন দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন।
তবে এই পরিস্থিতিকে কিছুটা অস্বাভাবিক বলে মনে করছে ফেডারেল রিজার্ভ। তারা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার এখন অনেক কম, শ্রমবাজার চাঙা, ফলে মানুষের এভাবে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতার কারণ ঠিক স্পষ্ট নয়। কারণ অনুসন্ধানে ভবিষ্যতে আরও তদন্ত করার কথা জানিয়ে ফেড বলেছে, মানুষের জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন আসছে। তাই মানুষ হয়তো সাধ্যাতীত জীবন যাপন করছে অথবা বিষয়টি প্রকৃত আর্থিক চাপের লক্ষণও হতে পারে।
তা সত্ত্বেও ঋণ খেলাপ করার প্রবণতা প্রাক্-মহামারি যুগের তুলনায় কিছুটা কম। এর কারণ হিসেবে ফেড বলেছে, এখন বন্ধকি ঋণের মান বেশ উঁচু, আগের মতো নয়।
টেড রসম্যান আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ক্রেডিট কার্ডের উচ্চ সুদহারের কারণে এই খেলাপের প্রবণতা বাড়ছে। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ই-কমার্সে কেনাকাটা ও শক্তিশালী অর্থনীতির কারণেও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির দাম বাড়ছে। সেপ্টেম্বর থেকে এ নিয়ে টানা তিন মাস দেশটিতে বাড়ির দাম বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন ৩০ বছর মেয়াদি গৃহঋণের সুদহার ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সেই আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তারপর আর কমার লক্ষণ নেই।
সেই সঙ্গে সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। অক্টোবরে দেশটির গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফ্যানির এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন যে অর্থনীতি ভুল পথে আছে। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৭১ শতাংশ।
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, মজুরি বাড়লেও মূল্যস্ফীতির কারণে তার প্রভাব বোঝা যাচ্ছে না। ৬৯ শতাংশ বলেছেন, গত বছর তাঁদের মজুরি যা ছিল, এখনো তাই আছে।
যুক্তরাষ্ট্র এমনিতেই ঋণপ্রবণ জাতি। দেশটির জাতীয় ঋণ এখন ৩২ লাখ কোটি ডলারের ওপর। তারা ঋণ করে বিপুল ঘাটতি বাজেট নিয়ে চলতে পারে। বিশেষ করে, ২০০০ সালের পর থেকে বিপুল অঙ্কের ঘাটতি নিয়ে তারা চলছে। সে জন্য বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র হলো বিশ্ববাজারে চূড়ান্ত ভোক্তা।