উৎপাদন কমছে চীন, কোরিয়া ও জাপানের কারখানায়ও

গত দুই বছরের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কারখানার উৎপাদন এই প্রথম কমেছে। জাপানের উৎপাদন ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

কয়েক মাস ধরে বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খবর হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এ কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং জীবনমানের অবনমন হওয়া—এসবও বড় খবর। এবার জানা গেল, মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশে কারখানার উৎপাদন কমতে শুরু করেছে।

এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) অনুসারে, জুলাই মাসে এশিয়াসহ ইউরোপের কারখানাগুলোর নতুন ক্রয়াদেশ কমতে শুরু করেছে। এই সূচক দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের কারখানার উৎপাদনের হাল বোঝা যায়। খবর রয়টার্সের

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স অনুসারে জুলাই মাসে ইউরো অঞ্চলের পিএমআই প্রায় ২ শতাংশ কমে গেছে। জুন মাসে যা ছিল ৫২ দশমিক ১ শতাংশ, জুলাই মাসে তা নেমে এসেছে ৪৯ দশমিক ৮-এ। ২০২০ সালের জুন মাসের পর এই প্রথম তা ৫০-এর নিচে নেমে এল।

এসঅ্যান্ডপি বলছে, নেদারল্যান্ডস ছাড়া পুরো ইউরো অঞ্চলের উৎপাদন কমছে। তবে এর মধ্যে জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্সে উৎপাদন হ্রাসের হার উদ্বেগজনক।

এদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে জার্মানির খুচরা বিক্রি গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে কমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব—এসব কারণে এমনটা ঘটছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ইউরো অঞ্চলের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি নয়, বরং সংকোচন হবে। তবে পিএমআইয়ের তথ্যে যা দেখা যাচ্ছে, সংকোচন ঠিক ততটা হবে না। তবে এবার সংকটের শুরুটা অতটা নড়বড়ে নয়, কারণ গত প্রান্তিকে ইউরো অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।

বিশ্ব অর্থনীতি যখন করোনাভাইরাসের প্রভাবমুক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, তখনই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে গত বছরের শেষ ভাগ থেকে শুরু হওয়া মূল্যস্ফীতির পালে আরও হাওয়া লাগে। দেশে দেশে রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে মূল্যস্ফীতির সূচক। এই বাস্তবতায় মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সবার হাতে একটাই অস্ত্র, সেটা হলো, নীতি সুদহার বৃদ্ধি। অন্যদিকে ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলো ব্যয় হ্রাসের পথে হাঁটছে। এতে সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাবে বলে আশঙ্কা।

জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের পিএমআই সূচক হ্রাস পেয়েছে ২০২০ সালের মে মাসের পর সবচেয়ে বেশি হারে। সে দেশেও উৎপাদন ও নতুন কার্যাদেশ কমছে। তা সত্ত্বেও ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এ সপ্তাহে নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বৃদ্ধি করবে।

নীতি সুদহার বৃদ্ধির ফলও পাওয়া যাচ্ছে হাতেনাতে। ফেডারেল রিজার্ভ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আর সেই যুক্তরাষ্ট্রে পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম এই অর্থনীতি কার্যত মন্দার কবলে পড়েছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার সংজ্ঞা ভিন্ন। আর জুলাই মাসে পরিচালিত রয়টার্সের এক জরিপে জানা গেছে, আগামী এক বছরের মধ্যে ইউরো অঞ্চলে মন্দার আশঙ্কা ৪৫ শতাংশ।

এশিয়ার অবস্থা ইউরোপের মতোই। গত দুই বছরের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কারখানার উৎপাদন এই প্রথম কমেছে। জাপানের উৎপাদন ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

অন্যদিকে চীনের কাইজিন পিএমআই সূচকে দেখা গেছে, তাদের বেসরকারি খাতের উৎপাদন কমেছে, যদিও কোভিডসংক্রান্ত বিধিনিষেধ কিছু শিথিল করা হয়েছে।