ভারতে ক্রমেই উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আইফোন নির্মাতা কোম্পানি অ্যাপল। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ভারতে ৬০ হাজার কোটি রুপি মূল্যের আইফোন উৎপাদন হয়েছে। আগামী মার্চে চলতি অর্থবছর শেষ হবে। এর আগেই দেশটিতে প্রায় এক লাখ কোটি রুপি মূল্যের আইফোন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে অ্যাপল।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া অঞ্চলের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোতেও ভারতে উৎপাদিত আইফোন রপ্তানি হয়। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে ইলেকট্রনিকস পণ্যের চাহিদা কমেছে।
অ্যাপলের কর্মকর্তারা বলেছেন, যদি চলতি অর্থবছরে ভারতে এক লাখ কোটি রুপি মূল্যের আইফোন উৎপাদনের মাইলফলকে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সেখানে তারা পৌঁছাবে। পাশাপাশি চলতি মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের দেশগুলোতে যে উৎসবের মৌসুম শুরু হচ্ছে, সেটিকে ঘিরেও প্রস্তুতি নিচ্ছে অ্যাপল।
ভারতে আইফোন উৎপাদন করবে অ্যাপল
ভারতে উৎপাদিত আইফোনের প্রায় ৭০ শতাংশ রপ্তানি হয়। ভারত নিজেই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। সেখানেও অ্যাপল পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর সময়ের মধ্যে ভারত থেকে ৪০ হাজার কোটি রুপি (৫০০ কোটি মার্কিন ডলার) মূল্যের আইফোন রপ্তানি হয়েছে।
৫০০ কোটি ডলারের মাইলফলক
অবশ্য ২০২২-২৩ অর্থবছরেই ভারত থেকে প্রথমবারের মতো একক ব্র্যান্ড হিসেবে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারের আইফোন রপ্তানির মাইলফলক অতিক্রম করে অ্যাপল। গত বছরেও সেই ধারাবাহিকতা ছিল। আর চলতি বছর প্রথম সাত মাসে রপ্তানিতে ১৮৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে অ্যাপলের। গত বছর এপ্রিল-অক্টোবরের মধ্যে ভারত থেকে ১৪ হাজার কোটি রুপির আইফোন রপ্তানি হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল ডেটা করপোরেশনের (আইডিসি-ইন্ডিয়া) ক্লায়েন্ট ডিভাইসের সহযোগী ভাইস প্রেসিডেন্ট নবকেন্দর সিং বলেন, ভারতকে আইফোনের বড় বাজার হিসেবে মনে করে অ্যাপল। পাশাপাশি মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে ভারতকে আইফোনের অন্যতম প্রধান উৎপাদন ও রপ্তানি কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে অ্যাপলের। রপ্তানির এই ইতিবাচক সংখ্যাগুলো সেই বিষয়গুলোকেই প্রতিফলন করে।
ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ুতে ফক্সকন ও পেগাট্রন নামে তাইওয়ানের দুটি ইলেকট্রনিকস কোম্পানি অ্যাপলের পণ্য উৎপাদন করছে। অন্যদিকে কর্ণাটক রাজ্যে অবস্থিত উইস্ট্রন নামে তাইওয়ানের আরেকটি কোম্পানিও (বর্তমানে টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন) অ্যাপলের পণ্য উৎপাদন করছে। এসব কোম্পানি মূলত আইফোনের ১২ থেকে ১৫ পর্যন্ত মডেলগুলো তৈরি করে।
২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ভারতকে একটি সম্ভাব্য উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে দেখছে অ্যাপল। প্রথম কয়েক বছরে আইফোনের সীমিতসংখ্যক কিছু মডেল যেমন আইফোন এসই, ৭ ও ৮ প্রভৃতি তৈরি করে বাজার পরীক্ষা করেছে। সাফল্য আসায় ভারতে আইফোন তৈরিতে ক্রমেই গুরুত্ব বাড়িয়েছে অ্যাপল।
বাজার–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির পাশাপাশি ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও ভালো করছে অ্যাপল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭০ লাখের কিছু কমসংখ্যক আইফোন বিক্রি হয়েছে ভারতে। তবে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে রেকর্ড ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি আইফোন বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে কোম্পানিটির। ভারতে আইফোন উৎপাদনের এমন ইতিবাচক অবস্থানের পেছনে দেশটির সরকারের দেওয়া প্রণোদনা কর্মসূচির সরাসরি প্রভাব রয়েছে।
গত এপ্রিলে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক ভারত সফর করেন। এ সময় তিনি মুম্বাই ও দিল্লিতে কোম্পানির প্রথম দুটি ফ্ল্যাগশিপ রিটেইল স্টোর বা খুচরা দোকান উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে সর্বশেষ ত্রৈমাসিক ফলাফল ঘোষণা করে অ্যাপল। এ সময় টিম কুক জানান, ভারত তাদের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে উত্তেজনাপূর্ণ একটি বাজার এবং অন্যতম প্রধান উৎপাদনের কেন্দ্র।
অ্যাপলের নিবন্ধন বইয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে অ্যাপল ইন্ডিয়ার টার্নওভার পৌঁছায় ৪৯ হাজার ৩২১ কোটি রুপিতে। যদিও তা অ্যাপলের বৈশ্বিক টার্নওভারের মাত্র দেড় শতাংশ। সে তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে অ্যাপলের বৈশ্বিক টার্নওভার ছিল ৩২ লাখ ৬০ হাজার কোটি রুপির সমপরিমাণ।