অর্থের সন্ধানে পাকিস্তান, এবার ছাড়বে পান্ডা বন্ড

পাকিস্তানছবি : এএফপি

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় নতুন বন্ড ছাড়বে পাকিস্তান। পাকিস্তানের নতুন অর্থমন্ত্রী বলেছেন, চীনের বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি ডলার সমমূল্যের পান্ডা বন্ড বিক্রি করা হবে। এটি হবে বছরের প্রথম পান্ডা বন্ড। সেই সঙ্গে আবারও আইএমএফের ঋণ চাইছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের নতুন অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব শুক্রবার ইসলামাবাদে নিজ কার্যালয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পাকিস্তান এখন ইউয়ানভিত্তিক বন্ড বিক্রি করতে পারলে অর্থায়নের উৎস বহুমুখী হবে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও নতুন বাজারের সন্ধান পাবেন। ব্লুমবার্গের সূত্রে এই খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মুহাম্মদ আওরঙ্গজেবের মতে, চীনা বিনিয়োগকারীদের কাছে এই বন্ড বিক্রির সম্ভাবনা আরও আগেই খতিয়ে দেখা উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন, চীনের বন্ড বাজার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গভীরতম। তাই পান্ডা বন্ড দেশের জন্য সবচেয়ে ভালো বিষয় বলেও তিনি মনে করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাকিস্তান ইতিমধ্যে ডলার ও ইউরোভিত্তিক বন্ড বিক্রি করেছে।

পাকিস্তানের নতুন অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন বা ২৫ থেকে ৩০ কোটি ডলার সমমূল্যের পান্ডা বন্ড বিক্রি করা হবে। এরপর নতুন বন্ড ছাড়া হতে পারে।

পান্ডা বন্ড হলো ইউয়ানভিত্তিক একধরনের বন্ড; সাধারণত বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান যেমন কোম্পানি, বহুজাতিক সংস্থা বা সরকার চীনের বাজারে তা বিক্রি করে থাকে।

মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব পেশাগতভাবে ছিলেন ব্যাংকার। তিনি জেপি মর্গ্যান অ্যান্ড চেজের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। বিতর্কিত নির্বাচনের পর সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তাঁকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

খুবই কঠিন সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন আওরঙ্গজেব। একদিকে দেশটিতে অর্থনৈতিক হতাশা চরম আকার ধারণ করেছে, আরেক দিকে সরকার ঋণখেলাপি হওয়া থেকে বাঁচতে প্রাণপণ লড়াই করছে। এশিয়া মহাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি পাকিস্তানে—ফেব্রুয়ারি মাসে তা ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। আগামী অর্থবছরে তাদের ২৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে; অথচ দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এর এক-তৃতীয়াংশ।

মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বলেন, সরকারের নগদ স্থিতি এখন ভালোই; সময়মতো ঋণ পরিশোধ করা তার পক্ষে অসম্ভব হবে না। এই ঋণ পরিশোধের কারণে যে পাকিস্তানি মুদ্রায় বিশেষ চাপ পড়বে তা নয়। তিনি আশা করেন, রুপির মান স্থিতিশীল থাকবে।

সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি মনে করি না এই সময় রুপির ওপর বড় ধরনের চাপ পড়তে পারে। ভবিষ্যতে রুপির মান সীমার মধ্যেই থাকবে।’ তবে তিনি মনে করেন, এখানে বড় বিষয় হচ্ছে তেলের দাম। কারণ, লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার কারণে তেলের বাজার কিছুটা অস্থিতিশীল।

চলতি বছর পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির দর বেড়েছে। ব্লুমবার্গের এক হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছর রুপির দর বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এ বছর এশিয়ার যেসব মুদ্রার দর বেড়েছে, তাদের মধ্যে রুপি অন্যতম।

নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এখন আওরঙ্গজেবের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে নতুন ঋণ নিয়ে আলোচনা। জন্মের পর থেকে পাকিস্তান বারবার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ২৪ বার আইএমএফের সহায়তা প্যাকেজ নিয়েছে দেশটি। ফলে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে, পাকিস্তান তাদের মধ্যে অন্যতম।

এদিকে আইএমএফ গত সপ্তাহে বলেছে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে গতি আনতে এবং আর্থিক ও বাহ্যিক দুর্বলতা দূরীকরণে পাকিস্তান মধ্যমেয়াদি নতুন ঋণ কর্মসূচির ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

কিন্তু বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, পাকিস্তানের নতুন এই ঋণ কর্মসূচি আগের কর্মসূচির চেয়ে আরও কঠিন হবে। নতুন ঋণ পেতে অর্থমন্ত্রীকে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে, যদিও এতে জনরোষ সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া তাদের খুচরা বিক্রয় ও আবাসন খাত থেকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সুযোগ খুঁজতে হবে। আগেও এই চেষ্টা করা হয়েছিল; কিন্তু এই কাজে দেশটি সফল হয়নি।

মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বলেছেন, পাকিস্তান আইএমএফের কাছে অন্তত তিন বছরের মেয়াদে প্রদেয় ঋণ চাইবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি অর্থমন্ত্রী—আইএমএফের বসন্তকালীন অধিবেশনের পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।