শুধু অর্থনৈতিক মন্দা নয়, ইউরোপের সমস্যা আরও বড়

ইউরো অঞ্চল এখন আরেকটি মন্দার মধ্যে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু আগামী বছরের শুরুতে যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হবে, অর্থাৎ চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের জিডিপির পরিসংখ্যান ইতিবাচক নাকি ঋণাত্মক হবে, সে বিষয়ে যে উদ্বেগ থাকার কথা, তা বৃহত্তর পরিসরে অনুপস্থিত।

আশা করা হচ্ছে, ২০ জাতির এই মুদ্রা ইউনিয়ন গভীর সংকোচন এড়াতে পারবে। অর্থনীতির গভীর সংকোচন হলে ফার্ম থেকে শুরু করে পরিবার, ব্যাংক—সবকিছুই আক্রান্ত হতে পারত। তবে খারাপ খবর হলো, প্রবৃদ্ধির হার শূন্য শতাংশের আশপাশে থাকবে। ফলে অর্থনীতির তাৎপর্যপূর্ণ পুনরুদ্ধার হবে, এমন কোনো প্রত্যাশা নেই বলে জানাচ্ছে রয়টার্স।

অর্থনীতির প্রতিবন্ধকতাগুলো এখন এতটাই শক্তিশালী যে আগামী বছর ইউরোপের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। মাঠের যে বাস্তবতা, তাতে এক শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও কম। গভীর কাঠামোগত সংকটের কারণে আগামী কয়েক বছরে ইউরোপ অন্যান্য বড় অর্থনীতির তুলনায় পিছিয়ে থাকবে।

রয়টার্সের সংবাদে আরও বলা হয়েছে, স্বল্প মেয়াদে ইউরোপের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস বড় খুব ভালো কিছু নয়, আবার তা শোচনীয় খারাপও নয়।  

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ইউরোপের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। চতুর্থ ত্রৈমাসিকের বাকি সময় যদি শুরুর দিককার মতো খারাপ যায়, তাহলে ইউরোপ হালকা মন্দার কবলে পড়বে।  
রয়টার্সের এক জরিপে জানা গেছে, উচ্চ সুদহার ও বাজেট কাটছাঁটের কারণে আগামী বছর ইউরোপের প্রবৃদ্ধি হতে পারে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।  

ইউরোপের শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি বাড়ছে। সে জন্য ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফিলিপ লেনের মতো আশাবাদী মানুষেরা মনে করছেন, ২০২৪ সালে ভোক্তা চাহিদা বাড়বে।

শ্রম বাজার এখনো চাঙা আর বিশ্ব অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তাই ইউরোপের রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।

কিন্তু ভিন্ন মতের মানুষেরা বলছেন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতির যে ধরনের প্রত্যাবর্তনের চিন্তা করছে, সে রকম লক্ষণ খুব বেশি নেই। কারণ হিসেবে তাঁরা যে বিষয়গুলো উল্লেখ করছেন সেগুলো হলো উচ্চ সুদহার, শ্রম বাজারের চাহিদা কমতে থাকা ও অন্যান্য দেশের চাহিদা প্রত্যাশামতো বৃদ্ধি না পাওয়া। বিশেষ করে উচ্চ সুদহার নিয়ে উদ্বেগ শেষ হচ্ছে না। সুদহার বেশি থাকার কারণে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বিশ্লেষকেরা সেটাই বলছেন।

ইউনিক্রেডিটের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এরিক নিয়েলসন বলেন, ইউরোপে এ বছর প্রবৃদ্ধি হয়নি, তার ওপর আগামী বছর তাদের রাজস্ব ও মুদ্রানীতির কারণে প্রবৃদ্ধির চাকা থমকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

শুধু আগামী বছর নয়, তার পরের সময়েও ইউরোপের অর্থনীতির এই দুরবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই নিরাশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণগুলো হলো কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর আকার ছোট হয়ে যাওয়া, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্যে আমলাতান্ত্রিক বাধা ও রাজনৈতিক কারণে ইউরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক একীভবনের হার কমে যাওয়া।

ইউরোপীয় কমিশন মনে করছে, এই অঞ্চলের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে আসবে। ২০২৭ সালের মধ্যে এই হার ১ দশমিক ২ শতাংশ কমবে। অথচ এই শতাব্দীর শুরুতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। মূলত জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণে এটি ঘটবে।

প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।