চীনা গাড়িনির্মাতার ঐক্যের ডাক, ‘পুরোনো কিংবদন্তি’ হটানোর আহ্বান

এ বছরের এপ্রিল মাসে চীনের সাংহাইতে অনুষ্ঠিত গাড়ির প্রদশর্নীতে দেশটির গাড়ি নির্মাতা বিওয়াইডি কোম্পানির একটি বুথ
রয়টার্সের ফাইল ছবি।

চীনের বৃহত্তম গাড়ি কোম্পানি এবার এক জাতীয়বাদী আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির গাড়িশিল্পকে একত্র হয়ে বিশ্ববাজারের ‘পুরোনো কিংবদন্তি’ হটানোর আহ্বান জানিয়েছে বিওয়াইডি। আর বিষয়টি ভার্চ্যুয়াল জগতে ভাইরাল হয়েছে। তবে যথারীতি এ ধরনের আহ্বানে যে প্রতিক্রিয়া হয়, তা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিযোগীরা সমালোচনায় মুখর হয়েছে।

বিওয়াইডি গাড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক অর্জন করেছে, সেই শুভক্ষণ তারা উদ্‌যাপন করেছে বৃহৎ আরেক উদ্দেশ্য নিয়ে। তারা চীনকে বৈশ্বিক গাড়ি উৎপাদনের শক্তিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে। খবর রয়টার্সের

বিওয়াইডির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ওয়াং চুয়ানফু ওই অনুষ্ঠানে চীনের ১২টি বড় গাড়ি কোম্পানির লোগোর সামনে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, চীনের গাড়ি ব্র্যান্ডগুলোর সময় এসেছে। চীনের গাড়ি ব্র্যান্ডগুলো বিশ্ববাজার মাত করবে—দেশের ১৪০ কোটি মানুষ তা দেখতে চায়, এটা তাদের আবেগ।’

ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলার বৈশ্বিক প্রতিযোগী হিসেবে বিওয়াইডির নাম এখন উচ্চারিত হয়। চীনা কোম্পনিটির এই আহ্বান সাড়া ফেলেছে। চীনের কোম্পানিগুলো কীভাবে দেশের বাজারে মূল্যযুদ্ধের শিকার হচ্ছে; বিশ্ববাজারে তারা কীভাবে নিজেদের হিস্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, সেই প্রসঙ্গও বিওয়াইডির অনুষ্ঠানে উঠে আসে।

চলতি বছর বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম কয়েক দফা কমিয়েছে ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা। তাতে চীনের কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চীনের কোম্পানিগুলো এই টেসলার সঙ্গেই বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সেই বাজারে তারা দামের কারণে টেসলার সঙ্গে পেরে উঠছে না; আবার দেশে দেশে তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানা বাধার মুখেও পড়ছে।

অনুষ্ঠানে চীনের গাড়ি রপ্তানির ওপর একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। সেই ১৯৬৫ সালে দেশটির রাষ্ট্রীয় এফএডব্লিউ গ্রুপ থেকে শুরু করে হাল আমলের বৈদ্যুতিক গাড়ি রপ্তানির চিত্র দেখানো হয় তাতে। নেপথ্যে ধারা বর্ণনাকারী বলেন, ‘আমাদের সবার নিজস্ব গল্প ও ইতিহাস থাকলেও গন্তব্য অভিন্ন। এ ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে ব্যবধান নেই।’

ভিডিও শেষে আহ্বান জানানো হয়, ‘আসুন, “চাইনিজ অটোস”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে পুরোনো কিংবদন্তিকে ধ্বংস করে নতুন বিশ্বমানের ব্র্যান্ড হয়ে উঠি।’

এই ভিডিও নিয়ে চীনের গাড়িশিল্পমহলে জাতীয়তাবাদী আবেগ তৈরি হলেও অনেকেই আবার সংশয়ী। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, এতে চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলো বিদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর চাপে পড়তে পারে। বিশেষ করে ইউরোপের বাজারের বিষয়ে তাঁরা সংশয়ী, যেখানে চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলো এমনিতেই ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’ শুল্কের মুখে আছে।

অন্যদিকে চীনের গ্রেট ওয়াল মোটরের একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাহী এই জাতীয়তাবাদী আবেগের বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলোর উচিত, বাস্তবতা মেনে নেওয়া। অর্থাৎ প্রতিযোগিতার বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া।’

চীনের সামাজিক মাধ্যম উয়েইবোতে গত শুক্রবার এক পোস্টে গ্রেট ওয়ালের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ওয়াং ইউয়ানলি বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলো কীভাবে একত্র হবে? মনে তিক্ততা নিয়ে একত্র হওয়ার কথা তো বলা যায় না, সে জন্য আগে নিজেদের মধ্যকার লড়াইটা শেষ করা দরকার।’

গ্রেট ওয়াল এর আগে নিজেই চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ করেছে যে বিওয়াইডির একটি হাইব্রিড গাড়ির মডেল কার্বন নিঃসরণের মানদণ্ড অনুসরণ করে তৈরি করা হয়নি। যদিও বিওয়াইডি সেই অভিযোগ খারিজ করে বলেছে, তারা আইনি ব্যবস্থা নেবে।

বর্তমানে চীনের হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে বিওয়াইডির একচ্ছত্র আধিপত্য। বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটির বাজারে বিক্রি হওয়া এ ধরনের গাড়ির ৩৭ শতাংশই তাদের। এমনকি চীনের বাজারে তারা ভকসওয়াগনকে ছাড়িয়ে গেছে।