বিমানযাত্রায় ছোট স্যুটকেসের চাহিদা কেন বাড়ছে

বিমানযাত্রার জন্য স্যুটকেস তৈরি করা হচ্ছেছবি: রয়টার্স

বিমানে চেক-ইন লাগেজের জন্য নতুন করে মাশুল বা ফি নির্ধারণ করেছে এয়ার কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনস। এমন অতিরিক্ত ফি নিয়ে বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছোট স্যুটকেস বা ব্যাকপ্যাকের চাহিদা। কারণ, এগুলো সহজেই কেবিনে বহন করা যায়, ফলে বাড়তি মাশুল গুনতে হয় না। খবর বিবিসির

চেক-ইন লাগেজ ফির নামে বিমানে যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া এমন অতিরিক্ত চার্জ ‘জাঙ্ক ফি’ নামেও পরিচিত। বিশেষ করে বাজেট বিমান সংস্থাগুলো এমন চার্জ বেশি নিয়ে থাকে।

কানাডার ডাউন টাউন বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লরেন আলেক্সান্ডার বিবিসিকে বলেন, ‘এই চার্জগুলো একদমই অযৌক্তিক। মনে হয় একধরনের প্রতারণা। আপনি মনে করেন, কম দামে টিকিট কিনলেন, কিন্তু পরে লাগেজ নেওয়ার জন্য আলাদাভাবে ২০০ ডলার দিতে হচ্ছে।’ অতিরিক্ত মাশুল এড়াতে লরেন কেবল একটি ছোট ব্যাকপ্যাক নিয়ে এসেছেন।

একসময় বিমানে আসন বাছাই, খাবার ও লাগেজ—সবই ছিল বিনা মূল্যে। তবে বাজেট এয়ারলাইনগুলোর উত্থানের পর চিত্র পাল্টে যায়। বাজেট এয়ারলাইন হচ্ছে লো-কস্ট ক্যারিয়ার, যা যাত্রীদের তুলনামূলকভাবে কম খরচে ভ্রমণের সুযোগ দেয়। মূলত বাজেট এয়ারলাইনের টিকিটের দাম সাধারণ এয়ারলাইনের তুলনায় অনেক কম থাকে। তবে খাবার, পানীয়, লাগেজ বহন ইত্যাদির জন্য তারা আলাদা মাশুল নিতে পারে।

২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যের ফ্লাইবি ছিল প্রথম এয়ারলাইন, যারা লাগেজ চেক-ইনের জন্য ২ পাউন্ড মাশুল আদায় শুরু করে। পরে অন্যান্য বাজেট এয়ারলাইন সেই পথ অনুসরণ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু নামীদামি বিমান সংস্থাও সেই পথে হাঁটে।

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বিমান সংস্থা হিসেবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে প্রথম ব্যাগের জন্য ১৫ ডলার ফি নেওয়া শুরু করে আমেরিকান এয়ারলাইনস। পরে অন্যরাও সেটি আদায় শুরু করে। গত বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থাগুলো লাগেজ ফি থেকে আয় করেছে ৭২৭ কোটি মার্কিন ডলার।

এমন পরিস্থিতিতে অনেকে এখন কেবল কেবিন ব্যাগ বহনের চেষ্টা করছেন। যুক্তরাজ্যের ব্যাগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যান্টলারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কির্সটি গ্লেন বলেন, ‘ছোট স্যুটকেসের চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া। আমরা গত মাসে একটি নতুন নকশার ছোট ব্যাগ বাজারে এনেছিলাম, যেটি বিক্রি হয়ে গেছে বিপুল পরিমাণে।’

অন্যদিকে কিছু ইউরোপিয়ান এয়ারলাইনস এখন হাতব্যাগের জন্যও অতিরিক্ত মাশুল আদায় করছে। রায়ানএয়ার, ইজি জেট, ভুয়েলিং, উইজএয়ার প্রভৃতি বিমান সংস্থা তার মধ্যে অন্যতম। এই নিয়মের বিরুদ্ধে গত মাসে ইউরোপীয় কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছে ইউরোপিয়ান কনজিউমার অর্গানাইজেশন (বিইইউসি)।

অবশ্য এই নিয়মের ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন ভারতের ইন্ডিগো এয়ারলাইন চেক-ইন লাগেজের জন্য কোনো ফি নেয় না। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী (সিইও) পিটার আইবার্স বলেন, ‘আমরা লাগেজ নিয়ে বিতর্ক চাই না। এ কারণে আমাদের প্লেনগুলো মাত্র ৩৫ মিনিটে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।’

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে বিমানে অতিরিক্ত ফি বাবদ বিমান সংস্থাগুলোর আয় দাঁড়াবে ১৪৫ বিলিয়ন ডলার। এটি পুরো এভিয়েশন খাতের মোট আয়ের ১৪ শতাংশ। গত বছর এই অতিরিক্ত মাশুলের পরিমাণ ছিল ১৩৭ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থের মধ্যে রয়েছে লাগেজ ফি, ওয়াই-ফাই সুবিধা, লাউঞ্জ ব্যবহার, খাবার প্রভৃতি।