খাদ্য ও পানীয় ব্যবসায় বিশ্বের সেরা ১০ ধনী

প্রথম আলো গ্রাফিক্স

বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে ফোর্বস ম্যাগাজিন। তাদের তৈরি শতকোটিপতিদের এই তালিকা পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। একই সঙ্গে তারা খাতভিত্তিক ধনীদের তালিকাও প্রকাশ করে। অর্থাৎ কোন খাতে ব্যবসা করে কারা সবচেয়ে ধনী হয়েছেন, সেই তালিকাও পাওয়া যায়।

এ সপ্তাহের আয়োজন বিশ্বের খাদ্য ও পানীয় খাতের সেরা ধনীদের নিয়ে। এই খাতের ব্যবসায়ীরাও ফোর্বসের মূল তালিকায় বেশ সামনের সারিতে আছেন। কেননা মানুষ এখন বিলাসদ্রব্য কেনার চেয়ে বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভেই বরং বেশি সচেষ্ট। সেই সঙ্গে মানুষের ভ্রমণ মহামারি-পূব৴ অবস্থায় ফিরে গেছে। সব মিলিয়ে খাদ্য ও ভ্রমণ খাতের এখন বেশ রমরমা অবস্থা। দেখে নেওয়া যাক, এই খাতের ধনীদের মধ্যে কারা সবেচেয়ে এগিয়ে।

ঝং শানশান, সম্পদ: ৭৫ বিলিয়ন ডলার, বয়স: ৭০, দেশ: চীন

ঝং শানশান
রয়টার্স

এই খাতের শীর্ষ ধনী ঝং শানশান বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নংফু স্প্রিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। কোম্পানিটি ২০২০ সালে হংকং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। চীনের হাংঝৌ শহরে জন্মগ্রহণ করা ঝং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অস্থির সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন। এরপর তিনি নির্মাণকর্মী, সাংবাদিকতা ও পানীয় বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন, এরপর শুরু করেন নিজের ব্যবসা। ঝং ওয়ানতাই বায়োলজিক্যাল নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রতিষ্ঠান কোভিড-১৯–সহ নানা সংক্রামক রোগের দ্রুত শনাক্তকরণ পরীক্ষার কিট তৈরি করেছে। বৈশ্বিক তালিকায় তাঁর অবস্থান ২৫তম।

মার্ক ম্যাটেশিৎস, সম্পদ: ৪৩.১ বিলিয়ন ডলার, বয়স: ৩৩, দেশ: অস্ট্রিয়া

মার্ক ম্যাটেশিৎস
ফেসবুক থেকে নেওয়া

মার্ক ম্যাটেশিৎস প্রয়াত অস্ট্রিয়ান ধনকুবের ডিট্রিখ ম্যাটেশিৎসের একমাত্র ছেলে। তাঁর বাবা ১৯৮৭ সালে থাই ব্যবসায়ী চালিও ইয়ুভিধিয়ার সঙ্গে এনার্জি ড্রিংক কোম্পানি রেড বুল গড়ে তোলেন। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ৭৮ বছর বয়সে ডিট্রিখের মৃত্যুর পর মার্ক উত্তরাধিকারসূত্রে রেড বুলে বাবার ৪৯ শতাংশ শেয়ার লাভ করেন। ২০২৩ সালে রেড বুল বিশ্বব্যাপী ১২ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২১০ কোটি ক্যান পানীয় বিক্রি করেছে। বাবার মৃত্যুর পর মার্ক ম্যাটেশিৎস কোম্পানির অর্গানিক পণ্যের প্রধানের পদ ছাড়েন। মূলত পরিচালক হিসেবে সামগ্রিকভাবে কোম্পানিতে আরও মনোযোগ যেন দিতে পারেন, সে কারণে নির্বাহী দায়িত্ব ছাড়েন তিনি। বৈশ্বিক তালিকায় তাঁর অবস্থান ৩৮তম।

জ্যাকুলিন মার্স, সম্পদ: ৪০.৬ বিলিয়ন, বয়স: ৮৬, দেশ: যুক্তরাষ্ট্র

জ্যাকুলিন মার্স
ফেসবুক

জ্যাকুলিন মার্স নিভৃতচারী ধনী। তিনি মার্স কনফেকশনারি সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী। মার্সের দাদা ফ্রাঙ্ক সি মার্স ১৯১১ সালে মার্স ইনকরপোরেটেড প্রতিষ্ঠা করেন। সাধারণ ক্যান্ডির রেসিপি দিয়ে এই ব্যবসার সূত্রপাত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ছোট ব্যবসা থেকে তৈরি হয় মিল্কি ওয়ে ও স্নিকার্সের মতো জনপ্রিয় চকলেট। ধীরে ধীরে তা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ক্যান্ডির পাশাপাশি পোষা প্রাণীর খাবার, সাধারণ খাদ্যপণ্য ও চুইংগামের মতো বহুবিধ খাতে এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে। বৈশ্বিক ধনীদের তালিকায় তাঁর অবস্থান ৪২তম।

জন মার্স, সম্পদ: ৪০.৬ বিলিয়ন ডলার, বয়স: ৯০ বছর, দেশ: যুক্তরাষ্ট্র

জন মার্স
ফেসবুক থেকে নেওয়া

জন মার্স জ্যাকুলিন মার্সের ভাই। ১৯৯৯ সালে বাবার মৃত্যুর পর বিশ্বের নামকরা ক্যান্ডি কোম্পানি মার্স ইনকরপোরেশনের অন্যতম উত্তরাধিকারী হন তিনি। বর্তমানে জন ও জ্যাকুলিন উভয়েই কোম্পানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের মালিক। ক্যান্ডি ছাড়াও মার্স এখন পোষা প্রাণীর পণ্য এবং খাবারের জগতেও বড় নাম। বৈশ্বিক তালিকায় তাঁর অবস্থানও ৪২তম।

জিওভান্নি ফেরেরো, সম্পদ: ৪০ দশমিক ৬ বিলিয়ন, বয়স: ৬১ বছর, দেশ: ইতালি

জিওভান্নি ফেরেরো
রয়টার্স

জিওভান্নি পরিবারের নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত কনফেকশনারি ব্যবসা ফেরেরোর নির্বাহী চেয়ারম্যান। পাউরুটির সঙ্গে যে তরল চকলেট সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়, সেই নাটেলার মূল কোম্পানি এটি। সেই সঙ্গে আছে কিন্ডার চকোলেট ও টিক ট্যাক মিন্টস। একসময় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেছেন ফেরেরো। ২০১৭ সালে তিনি সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তখন করপোরেট বিষয়াদিতে মনোযোগ দিতে নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালে ফেরেরো ২৮০ কোটি ডলারে নেসলের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুরো কনফেকশনারি ব্যবসা অধিগ্রহণ করেন। বৈশ্বিক তালিকায় তাঁর অবস্থান ৪৪তম।

এমানুয়েল বেসনিয়ে, সম্পদ: ২৯.২ বিলিয়ন, বয়স: ৫৫ বছর, দেশ: ফ্রান্স।

এমানুয়েল বেসনিয়ে
রয়টার্স

পরিবারের মালিকানাধীন বিশ্বের বৃহত্তম দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি ল্যাকটালিসের প্রধান শেয়ারহোল্ডার তিনি। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি। তাঁর দাদা ১৯৩৩ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ছোট ভাই জ্যাঁ-মিশেল ও বোন মেরি পরিবারের এই দুধ ও পনির ব্যবসায় যুক্ত আছেন। ল্যাকটালিস বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুগ্ধপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে এখন ৮৫ হাজার কর্মী কাজ করেন। বিশ্বের ৫১টি দেশে ২৬৬টির বেশি কারখানা আছে তাদের। বৈশ্বিক তালিকায় তাঁর অবস্থান ৭৬তম।

টড গ্রেভস, সম্পদ: ২২ বিলিয়ন, বয়স: ৫৩ বছর, দেশ: যুক্তরাষ্ট্র

টড গ্রেভস
রেইজিং কেইন্সের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ভাজা চিকেন ফিঙ্গার পরিবেশনের ফাস্ট ফুড চেইন রেইজিং কেইন্সের প্রতিষ্ঠা করেছেন টড গ্রেভস। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি শুধু চিকেন ফিঙ্গার বিক্রি করবেন—এমন ধারণাসংবলিত অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেন। কিন্তু শিক্ষক তাঁকে সবচেয়ে কম নম্বর দেন। সেই সঙ্গে ব্যাংকও ঋণ দিতে রাজি হয়নি। অর্থ জোগাড় করতে গ্রেভস পরে মৎস্যজীবী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৬ সালে নিজের সঞ্চয় ও কিছু ঋণ জোগাড় করে রেইজিং কেইন্স চালু করেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ৪২ অঙ্গরাজ্যের ৯০০টি শাখার মাধ্যমে বছরে ৫১০ কোটি ডলারের ব্যবসা করছে। বৈশ্বিক তালিকায় তাঁর অবস্থান ১০৬তম।

কিন ইয়িংলিন, সম্পদ: ২১.৮ বিলিয়ন, বয়স: ৬০, দেশ: চীন

কিন ইয়িংলিন
ফেসবুক

তিনি মিউয়ান ফুডসের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী। এটি চীনের অন্যতম বৃহৎ শূকরের মাংস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তিনি আগে একটি রাষ্ট্রীয় শূকর মাংস উৎপাদনকারী কোম্পানিতে কাজ করতেন। পরবর্তী কালে নিজের উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯২ সালে স্ত্রী চিয়ান ইয়িংয়ের সঙ্গে মাত্র ২২টি শূকর দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে শেনঝেন এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত মিউয়ানের বার্ষিক শূকর চাষের ক্ষমতা প্রায় ৮ কোটি। বৈশ্বিক তালিকায় তাঁর অবস্থান ১০৭তম।

জর্জ পাউলো লেমন অ্যান্ড ফ্যামিলি, সম্পদ: ১৬.৫ বিলিয়ন ডলার, বয়স: ৮৬, দেশ: ব্রাজিল

জর্জ পাউলো
কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

জর্জ পাউলো প্রথমে বিনিয়োগ ব্যাংকে কাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তী সময় তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিয়ার উৎপাদনকারী কোম্পানি অ্যানহিউজার-বুশ ইনবেভের প্রধান শেয়ারহোল্ডার হন। এই কোম্পানি আরও বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। এমনকি ওয়ারেন বাফেটের বার্কশায়ার কোম্পানির সঙ্গেও তাঁর ব্যবসা আছে। বৈশ্বিক তালিকায় তাঁর অবস্থান ১৫৬তম।

১০

লিন মুকিন অ্যান্ড ফ্যামিলি, সম্পদ: ১৩.৭ বিলিয়ন ডলার, বয়স: ৬১, দেশ: চীন

লিন মুকিন
ইস্টরক বেভারেজের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এনার্জি ড্রিংক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ইস্টরক বেভারেজের চেয়ারম্যান ও সিইও লিন মুকিন। তিনি আগে এক রাষ্ট্রীয় নির্মাণ সংস্থায় প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তী সময় শেনঝেনে পানীয় কোম্পানিতে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইস্টরকে যোগ দেওয়ার পর ২০০০-এর দশকের শুরুতে প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার জোগাড় করে কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করেন। এরপর তিনি এনার্জি ড্রিংক উৎপাদনে মনোযোগ দেন। ইস্টরক বর্তমানে কফি ও চা-ভিত্তিক পানীয়সহ অন্যান্য বাজারেও ব্যবসা করছে। বৈশ্বিক তালিকায় তাঁর অবস্থান ১৯৯তম।