সৌদি আরামকো ও অ্যাডনক এবার নজর ফেরাচ্ছে লিথিয়ামের দিকে

সৌদি আরবের শায়বাহে অবস্থিত আরামকোর তেলক্ষেত্রের দৃশ্যছবি: রয়টার্স।

অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার অংশ হিসেবে এবার লিথিয়াম উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে উপসাগরীয় দুই শীর্ষ তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো ও অ্যাডনক। এ পদক্ষেপ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে তেল কোম্পানিগুলোর নতুন বিনিয়োগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ব্যাটারি তৈরিতে লিথিয়াম ব্যবহার হয়।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মূলত তেলের খনিতে থাকা লবণাক্ত পানি বা ব্রাইন থেকে লিথিয়াম আলাদা করার উদ্যোগ নিচ্ছে কোম্পানি দুটি। বর্তমানে বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসা করার জন্য তারা লিথিয়াম উৎপাদনের চিন্তা করেছে।  

বিশ্বের দেশগুলো পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে চায়। এ কারণে তেল কোম্পানিগুলো ব্রাইন থেকে লিথিয়াম আলাদা করতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের চিন্তা করছে। এ তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সনমবিল এবং অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়ামের মতো কোম্পানিও।

গত কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবের অর্থনীতি তেলের ওপর নির্ভর করে চলছে। তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিকল্প সম্পদ খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেন। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশটিকে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করতে চান তিনি। এ জন্য শত শত কোটি ডলারও ব্যয় করছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, সৌদি আরামকো ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি বা অ্যাডনক এত দিন লিথিয়াম নিষ্কাশনসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনার খুব প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। তবে বর্তমানে লিথিয়ামকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মনে করা হয়। সে জন্য এই খনিজটি উৎপাদনে আরও মনযোগ বাড়াচ্ছে দেশ দুটি।

তবে লিথিয়াম নিষ্কাশন প্রযুক্তির ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেছেন তাঁরা। অন্যদিকে সৌদি আরামকো এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। অ্যাডনকও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বর্তমানে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে দেশ দুটি চাইলে এ খাতে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। সাধারণত উন্মুক্ত পিট মাইন থেকে লিথিয়াম আহরণ অনেক ব্যয়বহুল ও পরিবেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং। তবে লোনা জল থেকে লিথিয়াম নিষ্কাশন করার ক্ষেত্রে তেমন অসুবিধা নেই।

বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির জন্য বিশ্বে লিথিয়ামের ব্যবহার বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে লিথিয়ামের বড় প্রক্রিয়াজাতকারী ও ভোক্তা দেশ হচ্ছে চীন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে বিশ্বজুড়ে নতুন যানবাহন কেনা কমেছে। তাই গাড়ির চাহিদা কমায় লিথিয়ামের দামও কমেছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে বিশ্ববাজারে লিথিয়ামের দাম সর্বোচ্চ হয়েছিল। এর পর থেকে খনিজ পদার্থটির দাম প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। তবে শীর্ষ গাড়ি নির্মাতারা ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা চিন্তা করে লিথিয়াম মজুত করে রাখছে।

বিশ্লেষকেরা বলেছেন, আগামী বছরগুলোতে ইভি শিল্প লিথিয়ামের ওপর নির্ভর করবে। তবে ব্রাইন থেকে লিথিয়াম আহরণের একটি সমস্যা হলো এই প্রক্রিয়ায় লিথিয়ামের ঘনত্বের মাত্রা কম হতে পারে। তবে দুটি সূত্র জানিয়েছে, আরামকো ও অ্যাডনক লিথিয়াম পরিস্রাবণে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছে।

এরই মধ্যে সৌদি আরব নিজস্ব ইভি ব্র্যান্ড সিআর প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৫ লাখ ইভি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে সৌদি আরবের কোম্পানি ম্যাডেন সমুদ্রের পানি থেকে লিথিয়াম আহরণের কাজ করছে।

গত ডিসেম্বরে সৌদি শিল্প ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপমন্ত্রী খালিদ বিন সালেহ আল-মুদাইফার রয়টার্সকে জানান, তেলক্ষেত্র থেকে লিথিয়াম নিষ্কাষণের বিষয়ে ম্যাডেন ও আরামকো মিলেমিশে গবেষণাকাজ চালাচ্ছে।

আল-মুদাইফার বলেন, কোম্পানি দুটো ভালোভাবে সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও লিথিয়াম নিষ্কাশনের কাজ করছে। যদিও এর জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে; তবে এখানে ভালো বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।