দুবাইয়ের আবাসন খাতে চাঙা ভাব চলছেই

দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কয়েকটি বাড়ি।
সানাউল্লাহ সাকিব

বিশ্বের আবাসন ব্যবসার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধনীরা সেখানে বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনছেন। কয়েক বছর ধরেই এই ধারা দেখা যাচ্ছে।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সেই ধারা আরও জোরদার হয়েছে। ‘অ্যারাবিয়ান বিজনেস’–এর সংবাদে আরব আমিরাতের সরকারি পরিসংখ্যান সূত্রে জানানো হয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দুবাইয়ের আবাসন খাতে লেনদেন ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি।

দেশটির আবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আগামী দুই প্রান্তিকেও দুবাইয়ের আবাসন খাত চাঙা থাকবে। তবে লেনদেনে প্রবৃদ্ধির হার এতটা থাকবে না। তাঁদের ধারণা, পরবর্তী দুই প্রান্তিকে আবাসন খাতের প্রবৃদ্ধির হার ১০-১২ শতাংশের মধ্যে থাকবে।

বিশ্বের ধনীদের দ্বিতীয় ঘর হয়ে উঠছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। কয়েক বছর ধরেই এই বাড়বাড়ন্ত চলছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে দুবাইয়ের রেকর্ডসংখ্যক জমি-বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে। দেশটির সরকারি নথি অনুসারে, গত বছর দুবাইয়ে মোট ৯০ হাজার ৮৮১টি জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে।

বছরের প্রথম প্রান্তিকে দুবাইয়ে ভিলা, টাউনহাউস ও অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বেড়েছে। অ্যারাবিয়ান বিজনেসের প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দুবাইয়ে ভিলা ও টাউনহাউস বিক্রি বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি বেড়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। ৫-১০ লাখ দিরহাম মূল্যের আবাসনের চাহিদা বেশি বেড়েছে বলে সংবাদে জানানো হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, শারজাহ, আজমান, আবুধাবির আবাসন ব্যবসা কয়েক দশক ধরেই জমজমাট। জানা যায়, সে দেশে বিনিয়োগ করা হলে অর্থের উৎস সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করে না। কোন উপায়ে সেই টাকা অর্জিত হয়েছে, অর্থের মালিক অপরাধী কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে না। ফলে সারা বিশ্বের মানুষই সে দেশে বিনিয়োগ করছেন।

আরব আমিরাতও বিনিয়োগ করার মতো পরিবেশ তৈরি করেছে। সবার জন্য ব্যবসা করার সুযোগও খুলে দিয়েছে। দুবাইয়ে গড়ে উঠছে একের পর এক বড় অট্টালিকা; যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছে। তৈরি করা হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার মানের পরিবেশ। ফলে আনন্দ বিনোদনের পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশ—সবই দিচ্ছে দেশটি।

ফলে ফুটবলার ডেভিড বেকহাম, বলিউড তারকা শাহরুখ ও শীর্ষ ধনীদের মধ্যে মুকেশ আম্বানি—কে নেই দুবাইয়ে সম্পদ কেনার তালিকায়।

গোল্ডেন ভিসা

বিত্তবান বিদেশিদের আরও আকৃষ্ট করতে ২০১৯ সালে গোল্ডেন ভিসা চালু করে ইউএই। ২০ লাখ দিরহাম সমপরিমাণ অর্থসম্পদের মালিকানা থাকলেই এ ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। সম্প্রতি এই ভিসার শর্ত আরও শিথিল করা হয়েছে। বিদেশিদের বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধও শিথিল করা হচ্ছে। লেনদেনের ৭০ শতাংশ করা যাচ্ছে নগদ অর্থে। এ সুযোগ দেওয়ার পরই দুবাইয়ে বাংলাদেশিসহ অনেক দেশের নাগরিকদের সম্পদ কেনার পরিমাণ হু হু করে বাড়তে থাকে। ফলে দুবাই এখন বহুজাতিক ও বহু সাংস্কৃতিক নগর হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশ পাচার হয়—এমন অভিযোগ অনেক দিনের। কানাডার বেগমপাড়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই অর্থ পাচারকারীরা সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় বাড়ি গড়ে তুলছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সি৪ এডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে, তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে সম্পদ কিনেছেন ৪৫৯ জন বাংলাদেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাঁদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি সম্পদ ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।

দুবাইয়ে বিনিয়োগ করা বাংলাদেশিদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত নাম আরাভ খান। তিনি পুলিশ হত্যা মামলার আসামি।

মধ্যপ্রাচ্যের বাঁকবদল

গত বছরের শেষ প্রান্তে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতারে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বকাপ ফুটবল। তখন দেশটিতে এমন অনেক কিছুই হয়েছে, যা সাধারণত সেখানে হয় না; অর্থাৎ পর্যটক টানতে তাদের এসব ছাড় দিতে হয়েছে। এদিকে সৌদি আরবও নানাভাবে কঠোর শরিয়াহ আইন শিথিল করছে। নারীদের একা চলাফেরা থেকে শুরু করে গাড়ি চালানোর অধিকারও দেওয়া হয়েছে সে দেশে। এমনকি সৌদি আরব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে—এমন সংবাদও প্রকাশ করেছে আরব অঞ্চলের এক গণমাধ্যম।

সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে আর তার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে দুবাই।