চীনে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাজারের চোখ কমিউনিস্ট পার্টির দিকে
জুন মাসে চীনের ভোক্তা মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের দাম কমেছে। সামগ্রিকভাবে চীনে এখন মূল্যস্ফীতি নয়; বরং মূল্যহ্রাসের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই বাস্তবতায় আগামী সপ্তাহে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে। আশা করা হচ্ছে, সেই বৈঠকে অর্থনীতি চাঙা করার পদক্ষেপ ঘোষিত হবে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, জুন মাসে দেশটির ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। যদিও ব্লুমবার্গের এক জরিপে বিশ্লেষকেরা বলেছিলেন, জুন মাসে মূল্যস্ফীতি হবে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, গত মাসে চীনে প্রোডিউসার প্রাইস ইনডেক্স আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। তা সত্ত্বেও মে মাসের তুলনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে; ওই মাসে সংকোচন হয়েছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ মিলগেটে পণ্যের দাম গত তিন মাসে বেড়েছে; বিশ্লেষকেরাও তেমনটা আশা করেছিলেন। তথ্য-উপাত্ত দেখে মনে হচ্ছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই অর্থনীতিতে ভোক্তা ব্যয় কমেছে।
বহুজাতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিউয়েই ঝ্যাং বলেন, ‘চীনে মূল্যহ্রাসের প্রবণতা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি; অভ্যন্তরীণ চাহিদার গতি কম।’
মূলত খাদ্যের দাম কমে যাওয়ার বিশ্বের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে মূল্যহ্রাসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জুন মাসে তাজা সবজির দাম ৭ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে, ফলের দাম কমেছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ আর গরুর মাংসের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে চীনের ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস কমে গেছে। দেশীয় বাজারে চাহিদা না থাকায় রপ্তানি ও শিল্পোৎপাদনের ওপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রাখতে চায় চীন সরকার; কিন্তু তাতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন নতুন ফ্রন্ট খুলছে। তাদের অভিযোগ, চীন পণ্য উৎপাদনে ভর্তুকি দিচ্ছে—এ কথা বলে তারা চীনের পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি করছে। সম্প্রতি চীনের বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক বৃদ্ধি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তার আগে যুক্তরাষ্ট্রও শুল্ক বাড়িয়েছে।
শুধু উন্নত দেশ নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। যদিও চীনের সঙ্গে এদের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ভালো। মেক্সিকো, ব্রাজিলসহ লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশ চীনে উৎপাদিত ইস্পাতপণ্যে নতুন শুল্ক আরোপ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে চীনের নীতিনির্ধারকেরা ভিন্নপথে অর্থনীতি চাঙা করার চেষ্টা করছেন; কিন্তু দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশ আসে আবাসন খাত থেকে। সেই খাতে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হওয়ায় নীতিনির্ধারকদের কাজ কঠিন হয়ে গেছে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির তৃতীয় প্লেনামের আগে আগামী সপ্তাহে অর্থনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বৈঠক হওয়ার কথা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এখন অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের নীতিনির্ধারকেরা এত দিন যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অর্থনীতি চাঙা করতে সেগুলো যথেষ্ট নয়। অবিক্রীত বাড়ি-ফ্ল্যাট কিনতে তহবিল বরাদ্দ দিয়েও আবাসনের পড়তি দাম ঠেকানো যাচ্ছে না। পুরোনো গৃহস্থালি ও দীর্ঘস্থায়ী পণ্য বিনিময়ের যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তাতে এত বেশি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে যে বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে তা টানতে পারছে না।
চীনের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদেরা আশাবাদী, পরবর্তী প্লেনামে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অর্থনীতি চাঙা করতে নতুন নীতি ঘোষণা করবেন। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।
বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদ কমাবে। তখন পিপলস ব্যাংক অব চায়নার পক্ষেও মুদ্রানীতির রাশ আরও ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হবে—চীনা মুদ্রায় অতিরিক্ত চাপ তৈরি না করেও।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের অর্থনীতির এখন যে অবস্থা, তার সাপেক্ষে সুদহার অনেক বেশি। তাঁদের বিশ্বাস, এখন সুদহার কমানো হলে চীনের অর্থনীতি উপকৃত হবে।